মোহা.অলিদ মিয়া, মাধবপুর থেকে ॥ সুকন্ত তন্তবায়, মাধবপুরের সুরমা চা বাগানের ১০নং সেকশনের বাসিন্দা। আরো দশটা নারীর মত গৃহ কিংবা অন্যসব মেয়েলি কাজে নিয়োজিত হতে না পেরে নারীত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে সাইকেলের হাতল ও প্যাডেল চেপে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন। বাবা মনিন্দ্র তন্তবায় ও মা লক্ষী তন্তবায় এর সংসারের বড় মেয়ে সুকান্ত তন্তবায়। জ্যোসনা তন্তবায় ও সুমিত্রা তন্তবায় নামে ছোট দুটি বোন রয়েছে তার। একমাত্র ভাই নয়ন তন্তবায়সহ পরিবারের সদস্য ৪জন। প্রায় ৬ বৎসর আগে কিছু দিন ব্যবধানে পিতা মাতা উভয়ই মারা যান। ছোট বোন জোসনা বিয়ে দিলেও সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে নিজেকে কারো ঘরের ঘরনি ভাবার স্বপ্ন দেখার সময় পাননি ২১ বছরের সুকন্ত। জীবন ও জীবিকার তাগিদে পুরুষ-মহিলা কোন অনুভূতিই মাথায় আসেনা তার। ছোট ভাই বোন নিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাটাই একমাত্র উপলব্ধি। একমাত্র ভাই নয়ন তন্ত বায় এর চা বাগানে দৈনিক ১০২টাকা বেতনের কাজে পরিবারের ভরনপোষন সম্ভব হয়না বলেই জীবন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ছোট বেলায় শখের বসে আয়ত্ব করা দ্বিচক্রযান চালানো জীবনের মাঝপথে জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ন অংশে পরিনত হয়েছে। লাকড়ি কাটার দা’টি নিজের থাকলেও সুকন্ত ও তার কুড়ায়িত লাকড়ি বহনের দুই চাকার সাইকেলটি নিজের না। জেঠা (বাবার বড় ভাই) স্বরবিন্দু তন্তবায় এর সাইকেলটি চেয়ে নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৭কি.মি. প্যাডেল মেরে মাহঝিল এলাকায় যায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লাকড়ি কুড়িয়ে সাইকেলের পিছনে বেধে সাইকেল চালিয়ে বাজারে এনে বিক্রি করেন। সংগ্রহীত লাকড়ি ১শ থেকে সর্বোচ্চ ১২০টাকা বিক্রি করতে পারে। তা দিয়েই চালাতে হচ্ছে সুকন্তের ৪ সদস্যের পরিবারটি।
সুকন্তের সাথে কথা বললে তিনি বলেন- পিতামাতা হারানোর পর ছোট ভাইবোন ও নিজের জীবন বাচানোতে এতটাই ব্যস্ত যে নিজের বয়স কত তাও ভূলে যাচ্ছি। ভগবানের দেওয়া শরীরের শক্তি এবং একমাত্র দা’টি আমার আছে। একটি নিজস্ব বাহন থাকলে শ্রমজীবনে স্বাধীনভাবে রুজি করতে পারতাম। চা শ্রমিক নেতা লক্ষী রাম মুন্ড জানান-পিতামাতা হারিয়ে সুকন্ত নিজের জীবন যৌবন বিসর্জন দিয়ে ছোট ভাইবোনদের মুখে খাবার জোগার করে দিচ্ছে।
