স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে পাকিস্তানিদের বর্বরতা থেকে রক্ষা পায়নি ছোট্ট শিশু। নারকীয় হত্যাকান্ডের সঙ্গে সঙ্গে তারা কেড়ে নিয়েছিল বাঙালি মা-বোনদের ইজ্জ্বতও। খুচিয়ে-খুচিয়ে মেরেছে অসহায় মানুষদের। তাদের ব্রাশ ফায়ারে বিভিন্ন স্থানে পড়েছিল লাশের স্তুপ। একাত্তরের সেই ভয়াবহতার চিত্র রয়েছে কৃষ্ণপুরবাসীর স্মৃতিতে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেছেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির। এ সময় কৃষ্ণপুর বধ্যভূমিটি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি বধ্যভূমিটি সংরক্ষণে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মান করে দেয়ার আশ্বাসও প্রদান করেছেন এমপি আবু জাহির
বীর মুক্তিযোদ্ধা অমরেন্দ্র লাল রায়ের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান মুশফিউল আলম আজাদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম আলম, লাখাই থানার পরিদর্শক(তদন্ত) অজয় চন্দ্র দেব প্রমুখ। এর আগে গণহত্যায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করা হয়। পরে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত বধ্যভূমির উদ্বোধন করেন।
একাত্তরের ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থেকে একটি স্পিডবোট ও ৮/১০টি বাওয়ালী নৌকায় করে হানাদার বাহিনী কৃষ্ণপুরে আসে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় মোড়াকরি গ্রামের লিয়াকত আলী, বাদশা মিয়া, ফান্দাউকের আহাদ মিয়া, বল্টু মিয়া, কিশোরগঞ্জের লাল খাঁ, রজব আলী, সন্তোষপুর গ্রামের মোর্শেদ কামাল ওরফে শিশু মিয়াসহ অন্তত ৫০ রাজাকার।
সেদিন পাকিন্তানি বাহিনী অন্তত ১৩১ জন পুরুষকে স্থানীয় কমলাময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে। পরে, আগুন দিয়ে গ্রামের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় ও লুটপাট করে। এছাড়া গ্রামের অনেক নিরীহ নারীদের ওপর নির্যাতন চালায়। সকাল থেকে শুরু হওয়া এ হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
হানাদারদের হাত থেকে বাঁচতে গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ পুকুরে কচুরিপানার নিচে আশ্রয় নেন। কয়েকজন পড়ে থাকেন মৃতের ভান ধরে। হানাদাররা চলে গেলে মরদেহগুলো নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে গ্রাম ত্যাগ করেন তারা। কপালগুণে প্রাণে রক্ষা পান গোপাল রায়, প্রমোদ রায়, নবদ্বীপ রায়, হরিদাস রায় ও মন্টু রায়সহ আরও কয়েকজন।