সদর হাসপাতালে ছদ্মবেশে দালাল ধরলেন জেলা প্রশাসক

প্রথম পাতা

জুয়েল চৌধুরী ॥ হবিগঞ্জ আড়াইশ’ শয্যা আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ২৮ দালালের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল গত বছর। এরপর শাস্তির ভয়ে কিছুদিন গা ঢাকা দিলেও পরবর্তীতে পুনরায় সক্রিয় হয় তারা।
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের কর্মরর্ত কয়েকজনের মদদেই চলছিল দালালের দৌরাত্ম। সম্প্রতি দৈনিক খোয়াই’ দালালদের বিরুদ্ধে সচিত্র সংবাদ প্রকাশ করলে নজরে আসে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের। তিনি গত দুই দিন ধরে বাইসাইকেল, রিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছদ্মবেশে দালাল ধরতে অভিযানে নামেন এবং অনুসন্ধান শুরু করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিনি ছদ্মবেশে হাসপাতালে উৎ পেতে থাকেন। এক পর্যায়ে শহরের অনন্তপুর এলাকার ফিরোজ আলীর ছেলে বিলাল মিয়া ও বানিয়াচং উপজেলার হিয়ালা গ্রামের আব্দুল কাইয়ুমের পুত্র সোলিম মিয়াকে হাতেনাতে আটক করেন। পরে তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ জহুরুল হোসেন তাদের ‘টাউট আইন ১৮৭৯’ আওতায় তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন।
জেলা প্রশাসক জানান, দালালরা প্রতিনিয়ত গ্রামগঞ্জ থেকে আসা সাধারণ রোগীদের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়। তাই তাদের ধরতে জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জানা যায়, জেলার ২০ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতাল। চিকিৎসা নিতে এসে দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন গ্রামাঞ্চলের সাধারণ রোগীরা। দালালদের সিন্ডিকেট এতোই শক্তিশালী যে তাদেরকে ছাড়া কোনো ওষুধপত্র বাইরে থেকে কেনা যায় না। দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বার বার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলেও কার্যত কিছুই হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে দালালদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। প্রতিদিনই প্রতারিত হচ্ছেন বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল লোকজন। দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেক রোগীর প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকের সহায়তায় সক্রিয় এই দালাল চক্র।
২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় দালাল নির্মূলে উপ-কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ২৮ দালালের তালিকা প্রকাশ করা হয়। দালাল নির্মূল উপ-কমিটির আহ্বায়ক ডাঃ মিঠুন রায়সহ তিনজন স্বাক্ষরিত তালিকা অনুযায়ী দালালরা হলেন- সদর উপজেলার ছোট বহুলা গ্রামের ইউনুছ মিয়া, হবিগঞ্জ শহরের মোহনপুর এলাকার সেলিম মিয়া, বানিয়াচং উপজেলার শাহিন মিয়া, একই উপজেলার কান্দিপাড়া গ্রামের অসিত দাশ, হবিগঞ্জ শহরের শংকরের মুখ এলাকার সজল দাশ, সদর উপজেলার নূরুল মিয়া, লাখাই উপজেলার সাদিকুন্নেছা, হবিগঞ্জ শহরের মোহনপুর এলাকার ছায়া বেগম, ছোট বহুলা গ্রামের রেজিনা বেগম, সিরাজ মিয়া, বড় বহুলা গ্রামের জাফর মিয়া, চুনারুঘাট উপজেলার মাসুক মিয়া, মির্জাপুর গ্রামের শাহিন মিয়া, অনন্তপুর আবাসিক এলাকার বিলাল এবং বানিয়াচং উপজেলার হিয়াল গ্রামের সেলিম মিয়া। এছাড়াও রয়েছেন, অনন্তপুর এলাকার আব্দুল খালেক, উত্তর সাঙ্গর গ্রামের সুজন, একই গ্রামের চয়ন, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার মাছুম, লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের হাছান, চুনারুঘাট উপজেলার রেহেনা, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার যাত্রাবড়বাড়ি এলাকার টেনু মিয়া, বানিয়াচংয়ের মিজান এবং চুনারুঘাটের মাসুক ও শহরের রাজনগর এলাকার দ্বীন উল ইসলাম।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, হাসপাতালে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে দালালি চলছে। রোগী ও সচেতন মহলের দীর্ঘদিনের দাবির কারণে ও দৈনিক খোয়াইয়ে দালালদের বিরুদ্ধে সংবাদ দেখে অবশেষে আমি নিজেই ছদ্মবেশ ধারণ করে দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি এবং দুইজনকে আটক করে সাজা দেয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী অন্যদের ধরতেও অভিযান চলবে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *