অনিয়ম-অমানবিকতার শিকার হবিগঞ্জ ইসলামিয়া এতিমখানার ছোট্ট শিশুরা

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ ইসলামিয়া এতিমখানায় পর্যাপ্ত পরিমান টাকা থাকা সত্ত্বেও শিশুদেরকে মানহীন খাবার দেয়া, সারাদিন কাজ করানোসহ পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিশুরা খাবারের জন্য কষ্ট করলেও দান হিসেবে পাওয়া মাংস নিজেদের মধ্যে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দায়িত্বশীলরা। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় সমালোচনা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না শিক্ষক এবং এতিম শিশুরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি অনুদান মিলিয়ে হবিগঞ্জ ইসলামিয়া এতিমখানার বার্ষিক আয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। অথচ শিশুদেরকে দেয়া হয় অস্বাস্থ্যকর খাবার, তাদেরকে রাখা হয় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে। সারাদিন কাজ করিয়েও পেট ভরে খেতে না পারার কষ্ট নিয়েই বেড়ে উঠতে হচ্ছে এতিম শিশুদেরকে।
কয়েকজন শিশু জানায়, সকালবেলা ভাত দিলে দুপুরে দেয়া হয় না। আর দুপুরে দিলে বিকেলে দেয়া হয় না। সারাদিনই একটা না আরেকটা কাজ করানো হয় তাদেরদিয়ে। কাজে একটু ভুল হলেই শুনতে হচ্ছে গালমন্দ। এছাড়া এতিম শিশুদের উদ্দেশ্যে বিভিন্নজনের দেয়া শিরনীও তাদেরকে দেয়া হয় না। এসব বিষয়ে কাউকে জানালে তাদেরকে মারধরের হুমকি দেয়া হয় বলেও শিশুরা জানাল।
শিশুদের পরিচালনা কমিটির এমন আচরণের কথা দুইজন শিক্ষক দৈনিক খোয়াইকে জানিয়েছেন। তবে এই অমানবিকতা আর অনিয়মের বিষয়ে তারা কথা বলতে ভয় পান বলেও জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেল, সম্প্রতি কিছুদিন ধরে শিশুরা খাবারের জন্য অনেক কষ্টে আছে। এরই মাঝে বিভিন্ন জনের দানের মাধ্যমে প্রাপ্ত দেড়শ’ কেজি মাংস নিজেদের মধ্যে বাজার মূল্যের অর্ধেক দামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কার্যকরী কমিটি। তবে প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক সৈয়দ নাসির আহমেদ জানিয়েছেন, ফ্রিজে জায়গা না থাকার কারণে তারা মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নিজেরাই কেন এই মাংস ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে কার্যকরী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, মাংস বিক্রির ব্যাপারে জানাজানি হলে মানুষজনের দানের পরিমাণ কমে যাবে। তাই আমরা নিজেরই মাংস ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানিয়েছেন, বিষয়টি জানার পর সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক হাবিবুর রহমান দৈনিক খোয়াইকে জানান, আগামী রবিবার সেখানে পরিদর্শনে যাবেন। এরপর তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালে নিজস্ব ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত ৪ তলা ভবনে হবিগঞ্জ ইসলামিয়া এতিমখানায় ছাত্র সংখ্যা ১০০ জন। তবে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের কারণে বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছে ৩০ জন শিশু।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *