অসহায় মটাই মিয়ার পাশে হেল্পিং হ্যান্ড হবিগঞ্জ

ভিতরের পাতা

মোঃ মামুন চৌধুরী ॥ দৈনিক খোয়াইয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় শায়েস্তাগঞ্জে ভিক্ষুক মটাই মিয়াকে হুইল চেয়ার প্রদান করেছে ‘হেল্পিং হ্যান্ড হবিগঞ্জ’ নামের সামাজিক সংগঠন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনে এ হুইল চেয়ার প্রদান করা হয়।
এর আগে গত ২৩ নভেম্বর দৈনিক খোয়াইয়ে ‘মটাই মিয়ার শরীর আর চলে না, একটু সাহায্য করেন’ শিরোনামে ভিক্ষুক মটাই মিয়াকে নিয়ে একটি মানবিক সংবাদ প্রকাশ হয়। ‘হেল্পিং হ্যান্ড হবিগঞ্জ’ নামক সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এ সংবাদটি পড়ে ভিক্ষুক মটাই মিয়াকে একটি হুইল চেয়ার প্রদান করতে উদ্যোগ নেন। পরে তারা যোগাযোগ করেন দৈনিক খোয়াই’র সাথে। তখন নিউজের প্রতিবেদক সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মোঃ মামুন চৌধুরীকে জানানো হলে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ‘হেল্পিং হ্যান্ড হবিগঞ্জ’ সংগঠনের সদস্যরা নিউজের প্রতিবেদক সহকারে মটাই মিয়াকে চেয়ারটি প্রদান করেন।
চেয়ারটি পেয়ে খুবই খুশি মটাই মিয়া। তিনি বলেন, স্টেশন ভবনের গেইটে বসে পুরো দিন ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছি। কেউ আমার খোঁজ নেয়নি। খোয়াই আমাকে নিয়ে মানবিক নিউজ করায় ‘হেল্পিং হ্যান্ড হবিগঞ্জ’ নেতৃবৃন্দের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তারা আমাকে চেয়ার প্রদান করেছেন। আমি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। সেই সাথে আমাকে নিয়ে সংবাদ করায় দৈনিক খোয়াই ও প্রতিবেদক মোঃ মামুন চৌধুরীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তার স্ত্রী বানেছা বেগম (৬২) বলেন, চেয়ার উপহার পেয়ে আমরা আনন্দিত। তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
‘হেল্পিং হ্যান্ড হবিগঞ্জ’ সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ধরণের মানবিক সংবাদ কম প্রকাশ হয়। দৈনিক খোয়াইয়ে তথ্যবহুল নিউজ প্রকাশ হওয়ায় আমরা মটাই মিয়ার বিষয়ে জানতে পেরেছি। তাকে কিছুটা হলেও সহায়তা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমরা অসহায় মানুষের পাশে আছি। চাই ছিন্নমূল মানুষের পাশে থেকে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যেতে। শুধু তাই নয় করোনার প্রদুর্ভাবে মানুষ যেন ঘরে থাকে এবং খাবারের সংকটে না পড়ে সেজন্য আমরা সহায়তা করেছি।
উল্লেখ্য, শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের বস্তিতে ১ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন অসহায় মটাই মিয়া ও তার স্ত্রী বানেছা বেগম। শরীরে না কুলালেও সকাল হলেই তাকে স্টেশন ভবনের গেইটে হুইল চেয়ারে বসে ভিক্ষা করতে হয়। তিনি হাত দিয়ে খেতে পারেন না। হাঁটতে গেলে ক্র্যাচ ব্যবহার করতে হয়। তাই তিনি সবার কাছে একটু সাহায্য প্রার্থনা করেন।
কিন্তু এমন করুণ অবস্থা ছিলো না মটাই মিয়ার। নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়িতে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম হয়েছিল তার। অভিভাবকরা ছিলেন উচ্চ বিলাসী। অনেক জমিজমা থাকলেও কারণে-অকারণে টাকা পয়সা খরচ করায় অল্পদিনেই তাদের ধন সম্পদ ফুরিয়ে যায়। জমিজমা হারিয়ে তিনিসহ তার স্বজনরা অসহায় হয়ে পড়েন। এলাকায় বিভিন্ন কাজ করে কোনো রকমে জীবন চলছিল তার। হঠাৎ একদিন সদর উপজেলার ধুলিয়াখালে বাস দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর হাত-পা অচল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হন তিনি, কিন্তু কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। অসহায় মটাই মিয়া আরও অসহায় হয়ে যান। বাধ্য হয়ে বেছে নেন ভিক্ষার ঝুলি। সেই থেকে ভিক্ষা করে চলছেন তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *