আজমিরীগঞ্জে প্রশাসনের তৎপরতায়ও থেমে নেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

প্রথম পাতা

মোঃ আবু হেনা, আজমিরীগঞ্জ থেকে ॥ আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনে সক্রিয় একাধিক চক্র। উপজেলা প্রশাসন তৎপর থাকলেও থেমে নেই বালু উত্তোলনকারীদের দৌরাত্ম। ঘনফুট হিসেবে রাজস্ব দিয়ে স্ক্যাচম্যাপ অনুযায়ী নদী অথবা সরকারি জায়গা থেকে বালু উত্তোলনের নিয়ম রয়েছে। অথচ ওইসব চক্র প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিনা অনুমতিতে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। প্রতি ঘনফুট বালু ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করলেও সরকারকে রাজস্ব দিতে তারা নারাজ।
অন্যদিকে অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙ্গনের আশঙ্কায় পড়ছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পরিবেশ। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকায় যাওয়ার দাবি জানাচ্ছেন সাধারণ পেশাজীবী লোকজন।
তবে, সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচ হাজার মিটার পাইপ, পাঁচটি ড্রেজার মেশিন ও ইঞ্জিনসহ নৌকা জব্দের পর এগুলো আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করেছে উপজেলা প্রশাসন। হুশিয়ারি প্রদান করা হয়েছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের।
জানা গেছে, গত রবিবার সকালে পৌর এলাকা সংলগ্ন কাকাইলছেও রোডের পাশে নীচু ভূমিতে অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু স্তুপ করা হচ্ছিল। ওইদিনই বিকাল পাঁচায় অভিযান চালান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ। এ সময় বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত ১ হাজার ফুট পাইপ ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা জব্দের পর আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করেন তিনি।
গত মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মতিউর রহমান খান উপজেলার শিবপাশা ইউনিয়নের পশ্চিমবাগে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে মন্দরী গ্রামের নগর উল্লার ছেলে নজরুল ইসলামকে আটক করে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন। পাশাপাশি বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত ৩ টি ড্রেজার মেশিন ও ৫ হাজার মিটার পাইপ আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করেন। একইদিন বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ শুক্রীবাড়ি গ্রাম সংলগ্ন কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ২টি ড্রেজার মেশিন ও প্রায় ১৭০ মিটার পাইপ ধ্বংস করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি চক্র বদলপুর ইউনিয়নের পাহারপুর বাজারের বাঁশমহাল সংলগ্ন কালনী-কুশিয়ারা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে।
সেখান থেকে সম্প্রতি ২০ টাকা ঘনফুট দরে ২ লাখ ঘনফুট বালু বিক্রিও হয়। এই বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর বাঁধ। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ফসলী জমি তলিয়ে যাওয়ার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বদলপুর ইউনিয়নের কর্তব্যরত তহশিলদার আব্দুস সালাম দৈনিক খোয়াইকে বলেন, সুনামগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বালু উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন। বালু উত্তোলন বন্ধে তিনি কোন ভূমিকা পালন করতে পারবেন না বলেও জানিয়ে দিলেন তিনি।
এসব ব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ দৈনিক খোয়াইকে বলেন, বালু উত্তোলনের স্থানে অভিযান চালিয়ে সরঞ্জামদি জব্দ ও ধ্বংস করা হচ্ছে। পাহারপুরের বালু উত্তোলনের বিষয়ে তহশিলদার দেখবেন। সুনামগঞ্জের ইউএনও দাপ্তরিকভাবে বালু উত্তোলনের নির্দেশ দেয়ার বিষয়টি জানেন না বলেও দাবি করেন তিনি।
বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মতিউর রহমান খান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *