বাহার উদ্দিন, লাখাই থেকে ॥ গ্রাফটিং ও পলিথিন মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো এবং বেগুন চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন লাখাই উপজেলার লখনাউক গ্রামের সব্জি চাষী নূরুল আমিন। আগে প্রায় আট বিঘা জমিতে ধান, পাট, ফুলকপি, বাঁধাকপি চাষের আয়ে সংসার চালাতেন।
প্রায় ৫ বছর পূর্বে উপজেলা কৃষি বিভাগে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রাফটিং ও পলিথিন মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো এবং বেগুন চাষের ধারণা পান। এরপর শুরু হয় নতুন স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
এরই মাঝে গত বছর মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া হর্টিকালচার সেন্টার থেকে কাটাবেগুনের সাথে টমেটোর গ্রাফটিং চারা সংগ্রহ করে নিজের জমিতে চাষ শুরু করেন। কিন্তু চাষাবাদের কাজে কিছুটা সময় বিলম্ব হওয়ায় কাক্সিক্ষত ফলন হয়নি, পাননি ন্যায্য মূল্যও। এরপরও থেমে থাকেননি।
নূরুল আমিন দৈনিক খোয়াইকে জানিয়েছেন, চলতি বছরের আষাঢ় মাসে চারা সংগ্রহ করে চল্লিশ শতাংশ জমিতে টমেটো এবং বত্রিশ শতাংশ জমিতে কালোবেগুন বা সিংনাথ বেগুন চাষ করেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচর্যা ও কীটনাশক ব্যবহার করে চাষাবাদ করছিলেন। এরই মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় জমিতে পানি উঠে। কিন্তু গ্রাফটিং ও পলিথিন মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করায় বন্যায় ঝুঁকি থাকলেও তেমন ক্ষতি হয়নি। ইতেমধ্যে টমেটো ও বেগুনের ফসল তোলা ও বিক্রি শুরু হয়েছে। জমি থেকে পাকা টমেটো প্রতি কেজি ৭৫-৮০টাকা দরে এবং বেগুন প্রতিমণ ১৫০০-১৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, এ পর্যন্ত ষাট হাজার টাকার টমেটো এবং ছাব্বিশ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি হয়েছে। বাম্পার ফলন এবং উচ্চমূল্যের বিক্রয়ে তিনি ও তার পরিবার উল্লাসিত। আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আড়াই লাখ টাকা মূল্যের সব্জি বিক্রয়ের।
নুরুল আমীন আরও জানান, আমার জমির ফলন দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও চাষ করতে আগ্রহী হয়েছেন। আমি তাদের বিভিন্ন পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। কঠোর পরিশ্রমী ও উদ্যমি নূরুল আমীন লখনাউক গ্রামের মৃত সমুজ আলীর ছেলে।
এ ব্যাপারে ইউনিয়নের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ খান জানান, কাটা বেগুনের সাথে টমেটোর গ্রাফটিং এবং পলিথিন মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ খুবই কার্যকরী। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে ফসলে রোগবালাই কম হয় এবং কীটনাশকের দরকার খুবই কম পড়ে। এছাড়া জমিতে আগাছাও জন্মায় না।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আজহার মাহমুদ জানান, লাখাইয়ে সবজির চাষ অপেক্ষাকৃত কম। তাই সবজি উৎপাদন বাড়াতে আমারা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদনে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া গ্রাফটিং পদ্ধতিতে চারা সংগ্রহে সহযোগিতা করছি।