চুনারুঘাটে স্ত্রী’র মান ভাঙাতে প্রেমিকাকে ধর্ষণের পর হত্যা

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চুনারুঘাটে অজ্ঞাত তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের ৭ মাস পর হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন হয়েছে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন খুনী স্বামী-স্ত্রী। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
একইদিন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান উদ্দিন প্রধানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আসামীরা। তারা হলেন, চুনারুঘাট উপজেলার রানীগাঁও ইউনিয়নের আব্দুল খালেকের ছেলে আফসার মিয়া (২৮) ও তার স্ত্রী রিপা বেগম (২৪)।
নিহত তরুণীর নাম রোকসানা আক্তার মিষ্টি (২২)। তিনি নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার কামালপুরের খোরশেদ আলী মজমুদারের মেয়ে। মিষ্টি মৌলভীবাজারে একটি ডিটারজেন্ট কোম্পানীতে চাকুরী করতেন। পিতা-মাতার সাথে ঝগড়ার কারণে বাড়িতে যেতেন না।
পুলিশ জানায়, কর্মক্ষেত্রের সুবাদে শুকলা নামে এক তরুণীর সাথে মিষ্টির পরিচয় হয়। তাদের মাঝে বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে দুইজন একসাথে ভাড়া বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নেন। পরে মৌলভীবাজারে আফছার ও তার স্ত্রী রিপা বেগমের ভাড়া বাসা সাবলেট নেন রোকসানা এবং শুকলা। তবে কিছুদিন পর শুকলা এ বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, এক বাসায় থাকার সুবাদে মিষ্টি ও আফসারের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি বুঝতে পেরে আফসারের সাথে ঝগড়া শুরু করেন তার স্ত্রী রিপা। স্ত্রীকে মারপিটও করেন আফছার। এজন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি আফসারের বাসা থেকে বাবার বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধুলিয়াখালে চলে আসেন রিপা। পরদিন ফোন করে দুঃখ প্রকাশের পর রিপাকে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান আফসার। তবে রিপা ফোনে তার স্বামীকে জানান মিষ্টিকে মেরে ফেললে তিনি আসবেন। অনথ্যায় এ সংসারে ফিরবেন না। স্ত্রীর অভিমান ভাঙাতে মিষ্টিকে হত্যায় সম্মত হয়ে যান আফছার। পরে মৌলভীবাজারের বাসায় ফিরেন রিপা।
এরপর গত ৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মিষ্টিকে সাথে নিয়ে আফছার ও তার স্ত্রী রিপা হবিগঞ্জের ধুলিয়াখালে আসেন। ওইদিন রাতেই তিনজন ফিরে যান চুনারুঘাটের পাচারগাঁওয়ে আফসারের পিতার বাড়িতে। খাওয়া-দাওয়া সেড়ে রাত দশটায় মিষ্টিকে নিয়ে যাওয়া হয় চাটপাড়া হাওরে। সেখানে একটি নির্জন স্থানে স্ত্রীর ইচ্ছায় মিষ্টিকে ধর্ষণ করেন আফছার। এক পর্যায়ে গলায় ওড়না পেছিয়ে মেয়েটিকে হত্যা করেন দু’জনে। পরে সাথে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিষ্টির থুতণীতে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
কিছুক্ষণ পর রক্তমাখা হাত ধুয়ে স্ত্রী রিপাকে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন আফছার। খুনীরা মিষ্টির সাথে থাকা মোবাইল ও ভ্যানেটি ব্যাগ সাথে নিয়ে নেন। ওইদিন রাতেই দু’জন পুনরায় মৌলভীবাজারের বাসায় ফিরেন। পরে মিষ্টির মোবাইল ফোনটি মৌলভীবাজার শহরে এক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করা হয়।
পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি মরদেহটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয় লোকজন। তখনও মেয়েটির পরিচয় মেলেনি। এনিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। এক পর্যায়ে ৭ মাস পর ক্লু লেস এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন হল।
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাজমুল হক দৈনিক খোয়াইকে জানান, নানা কৌশল অবলম্বন শেষে আফছারের মাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ঘটনার রহস্যে পৌঁছায় পুলিশ। পরে নারী কনস্টেবলকে দিয়ে মোবাইল ফোনে প্রেমের অভিনয়ের মাধ্যমে গত মঙ্গলবার আফছার ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কাঁচি ও মিষ্টির বিভিন্ন জিনিস-পত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *