স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের নদ-নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পানি কমতে থাকলেও বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। ইতিমধ্যে জেলার পাঁচ উপজেলায় ২২টি ইউনিয়নের ৮ হাজার ২৪০ পরিবার বন্যা কবলিত হয়েছে; পানিবন্দি অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।
জেলা প্রশাসনের বিবেচনায় বন্যা কবলিত উপজেলাগুলো হলÑ হবিগঞ্জ সদর, চুনারুঘাট, শায়েস্তাগঞ্জ, মাধবপুর ও নবীগঞ্জ।
টানা দু’দিন খোয়াই ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গতকাল থেকে পানির স্তর নিচে নামতে শুরু করেছে। তবে আগের দুদিন খোয়াই নদীর বাঁধ ভাঙা আতঙ্কে বিনিদ্র রজনী পার করেছেন লোকজন।
স্থানীয়রা জানান, খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় দুইরাত না ঘুমিয়ে আতঙ্কিত লোকজন বাঁধ পাহাড়া দিয়েছেন। বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র হওয়ায় লোকজন রীতিমত আতঙ্কে ছিলেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গতকাল রাতে অনেকটা শান্ত হয়ে ওঠে খোয়াই। পানি বৃদ্ধি বন্ধ হওয়ার খবর দিয়েছে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
দপ্তরটির নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, গতকাল সন্ধ্যায় চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা পয়েন্টে খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ১৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শায়েস্তাগঞ্জ পয়েন্টে ১২৩ সেন্টিমিটার উপরে ও সদর উপজেলার মাছুলিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তিনি আরও জানান, গত ১৫ ঘন্টায় খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টে পানির স্তর ৯৫ সেন্টিমিটার নিচে নেমেছে। একই সময়ে শায়েস্তাগঞ্জ পয়েন্টে ১৫ এবং মাছুলিয়ায় ৪৫ সেন্টিমিটার নিচে নামে পানির স্তর।
গতকাল রাত পর্যন্ত আগের ২৪ ঘন্টায় হবিগঞ্জে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে মাত্র ১ মিলিমিটার; আর পানি বৃদ্ধির প্রথম ২৪ ঘন্টায় ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল।
এদিকে, কুশিয়ারা নদীতে বানিয়াচং উপজেলার মার্কুলী পয়েন্টে গতকাল বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার এবং আজমিরীগঞ্জে ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সুমি রানি বল খোয়াইকে জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য ১২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। সেগুলোতে আশ্রয় নেওয়া লোকের সংখ্যা ১০৯ জন। পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য ১ হাজার ২৩৫ টন চাল, ১ হাজার ৬৯০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ ২৩ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যার পানিতে বসতবাড়ি এবং ধান ও সব্জির জমি তলিয়ে গেছে। বদ্ধ জলাশয় থেকে বের হয়ে যাওয়া মাছ ধরছেন লোকজন। বন্যা দুর্গত অনেক লোক চরম দুর্ভোগে জীবনযাপন করছেন।
সদর উপজেলার রিচি ও লোকড়া ইউনিয়নে ২০টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ও করাঙ্গী নদীর তীরবর্তী অর্ধশতাধিক গ্রাম বন্যা কবলিত।
চুনারুঘাট উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও চুনারুঘাট পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়ন ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত।
হবিগঞ্জ হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরে আলম জানান, বন্যায় হবিগঞ্জের ৩৭৩ হেক্টর রোপা আমনের বীজতলা, ৬ হাজার ৭২৬ হেক্টর রোপা আমন, ১ হাজার ৯৪৫ হেক্টর আউশ ও ৪৬৮ হেক্টর জমির শাকসব্জি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।