স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর পরগণায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। দেশে অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে একটি প্রভাবশালী চক্র এ কাজ করছে। এতে পাহাড় ধ্বসের ঝুুঁকি বেড়েছে উল্লেখ করে স্থানীয়রা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। পরিবেশবিদরা পাহাড় কাটায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া, গজনাইপুর ও পানিউমদা ইউনিয়ন নিয়ে পাহাড়ি অঞ্চল দিনারপুর পরগণা। ২০১৭ সালে হবিগঞ্জের সকল পাহাড় ও টিলা সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে বছরের অধিকাংশ সময়জুড়ে দিনারপুর এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কেটে পাহাড়ি লাল মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না থাকায় ও দেশে চলমান অস্থিরতার সুযোগে গত রবিবার থেকে গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজার-শতক-মৌলভীবাজার সড়কের পাশে পাহাড় কাটা চলছে। এক্সকেভেটর দ্বারা মাটি কাটা হচ্ছে। পরে ট্রাকভর্তি করে মৌলভীবাজারের আথানগীরি এলাকায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
পাহাড় কাটার ফলে আশপাশের বাড়িঘর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় ধ্বসে পড়তে পাড়ে বাড়িঘর। প্রতিকার চেয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। শতক গ্রামের অলি মিয়া, মুবেদ মিয়া, আমিনুর রহমান, পাবেল আহমেদ যৌথভাবে এই লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘নবীগঞ্জ, বাহুবল, চুনারুঘাট ও মাধবপুরে পাহাড়-টিলা কেটে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম চলছে বহুবছর ধরে। এতে সার্বিক পরিবেশ প্রতিবেশ ও প্রকৃতির উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে সেটা অপূরণীয় ক্ষতির কারণ। দেশের পরিবেশ আইন, প্রচলিত আইনসহ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে কিছু লোক এই অঞ্চলের পাহাড়-টিলা কেটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে। উচ্চ আদালত কর্তৃক পাহাড়-টিলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এগুলো রক্ষায় কার্যকর কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করার জন্য যে কার্যকর ভূমিকা থাকা দরকার, আইন প্রয়োগ করা দরকারÑ সেটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে পালন করছেন না। দায়ীদের চিহ্নিত করে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাসহ পাহাড় টিলাকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শাহীন দেলোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এখন তো দেশে অস্থিরতা চলছে, এই সুযোগে একদল মানুষ পরিবেশ ধ্বংসে লিপ্ত হয়েছে।’ এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর নবীগঞ্জ ক্যাম্পের মেজর তানভীর বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিষয়টি আমরা জেনেছি, ইতিমধ্যে আমাদের একটি টহল টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।’
