স্টাফ রিপোর্টার ॥ দশজন সহকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের কমপক্ষে আড়াই বছরের বেতন আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (নন-এমপিও) মোঃ জাকির হোসেন মহসিনের বিরুদ্ধে। আরও নানা কারণে তাঁর পদত্যাগ দাবি করছেন শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীরা।
ভুক্তভোগী দশজন শিক্ষক গতকাল বুধবার জাকির হোসেন মহসিনের প্রতি বানিয়াচং উপজেলা প্রশাসন ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট লিখিত অনাস্থা দেন। এর আগে ৩১ আগস্ট বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী প্রধান শিক্ষকের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের শান্ত করে।
গত ২৪ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর নিবন্ধন ও বিএড না থাকায় জাকির হোসেন মহসিনের নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সভাপতিকে নির্দেশ দেয়; কিন্তু তা প্রতিপালন হয়নি। জাকির হোসেন স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।
অভিযোগ উঠেছে, এমপিওভুক্ত দশ জন সহকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের ২৮ থেকে ৪৩ মাসের স্কুল অংশের বেতন বকেয়া। কিন্তু গত ১৫ জুলাই বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ২১ লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করলেও জাকির তাঁদের বেতন দেননি। বেতন আটকে থাকা শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক খোয়াইকে বলেন, তিনি টাকার অভাবে স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে পারছেন না। শিক্ষক নিজেও অসুস্থ। এ পরিস্থিতিতেও বেতন বকেয়া থাকায় তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট দেওয়া অভিযোগে সহকারি শিক্ষকরা উল্লেখ করেন মুরাদপুর এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (নন-এমপিও) মোঃ জাকির হোসেন মহসিনের নিয়োগ অযোগ্যতার কারণে তাঁর এমপিও ফাইল কয়েক দফায় অগ্রাহ্য হয়েছে। এজন্য তিনি প্রায়ই বলেন, “আমি তো এমপিওভুক্ত হতে পারবো না, তাই বিদ্যালয়কে ধ্বংস করে ফেলব, কর্তৃপক্ষ আমার কি করবে?”
সহকারি শিক্ষকরা এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১২টি নির্দিষ্ট অভিযোগসহ বিদ্যালয়ে আরও নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন।
গতকাল অনাস্থার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, জাকির হোসেন মহসিন সকল শিক্ষক কর্মচারীকে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করছেন ও বিদ্যালয় পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন। সেজন্য তাঁর প্রতি অনাস্থা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষকরা আরও জানান, ৩১ আগস্ট বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী প্রধান শিক্ষকের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের শান্ত করে। তবে শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে তাঁরা অনঢ় থাকে। এ বিষয়ে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বৈঠক বসলে প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন মহসিনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অনাস্থার প্রস্তাব পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে হবিগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ খোয়াইকে বলেন, অভিযোগ তদন্তের জন্য একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।