বাহার উদ্দিন ॥ রাজনীতি, সৃজনশীলতা, শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে লাখাই উপজেলায় রয়েছে কীতির্মান মানুষের বিচরণ। আছে সংবাদপত্রেরও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে অবদান রাখছেন এখানকার সাংবাদিকেরা। কিন্তু স্থানীয়ভাবে একটিও দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশের প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়নি এখনও। তবে অনিয়মিত ভাবে মানুষের সামনে আসছে একাধিক সাপ্তাহিক এবং মাসিক পত্রিকা।
তথ্যে পাওয়া গেছে, রাঢ়িশাল গ্রামের হরেন্দ্র চন্দ্র সিংহ ১৯১৫ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত কলকাতা থেকে একটি পত্রিকার সম্পাদনা করেন। এছাড়া ‘কালাউক নিশান’ নামক বুলেটিন প্রকাশ করেছিলেন মুড়িয়াউক গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক গাজী শাহজাহান চিশতী। সেটা অবশ্য বহুদিন পূর্বে। ২০০৭ থেকে ১৩ সাল পর্যন্ত অনিয়মিত ভাবে প্রকাশ হয় ‘কালাউক পরিক্রমা’ নামক আরো একটি পত্রিকা। অনিয়মিত এই মাসিকের সম্পাদনায় ছিলেন শাহীনুর রহমান মোল্লা। সংবাদপত্রে সম্পৃক্ত হয়ে এ উপজেলার আরো অনেকেই রেখেছন সফলতার স্বাক্ষর। এদের একজন কাটিহারা গ্রামের ডঃ মুখলেছুর রহমান চৌধুরী। জাতীয় ভাবে তিনি পরিচিতি পান কূটনৈতিক রিপোর্টার হিসেবে। দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির তথ্য সচিব এবং উপদেষ্টারও।
দৈনিক আজাদ’র মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন মানপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান। দায়িত্ব পালন করেন কেন্দ্রীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতির। প্রয়াত প্লুটন দাস গুপ্ত কাজ করেছেন লাল সবুজের রিপোর্টার হিসেবে। শীবপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিন ছিলেন সিলেটের জনপ্রিয় দৈনিক যুগভেরীর স্টাফ রিপোর্টার।
নানা প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধ আর সংগঠিতভাবেই ভাবে কাজ করছেন এ উপজেলার সাংবাদিকেরা। লাখাই প্রেসক্লাবের শুভ সূচনা হয় ১৯৮৪ সালে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ক্লাবটির দায়িত্ব পালন করেছেন মানপুরের আব্দুল হান্নান, লাখাই’র মাওলানা জালাল আহমেদ, করাবের রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন এবং পশ্চিম বুল্লার অ্যাডভোকেট মোঃ আলী নোয়াজ। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মাওলানা জালাল আহমেদ, অ্যাডভোকেট আলী নোয়াজ এবং দেবাশীষ আচার্য্য।
সর্বশেষ ২০১০ সালে অ্যাডভোকেট মোঃ আলী নোয়াজ সভাপতি, দেবাশীষ আচার্য্য সাধারণ সম্পাদক এবং আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে লাখাই প্রেসক্লাবের পূর্ণ কমিটি গঠন হয়। এর প্রায় এক বছর পর সাংবাদিকতায় দেখা দেয় দ্বিধাবিভক্তি। যে কারণে রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন সভাপতি ও আবুল কাশেমকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন হয় ‘লাখাই উপজেলা প্রেসক্লাব’ নামক অপর কমিটি।
বর্তমানে লাখাই প্রেসক্লাব চলছে দ্বিধাবিভক্তি নিয়েই। প্রত্যাশা রয়েছে অচিরেই সকল সাংবাদিক পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক ছাতার নিচে অবস্থান করবেন। সময়ের পরিক্রমায় লাখাই প্রেসক্লাব এগিয়ে চলছে। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে এখানকার সাংবাদিকদের মাধ্যমে।
২০১৩ সালের শুরুতে সততা ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সংগ্রহের অঙ্গীকার নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় লাখাই রিপোটার্স ইউনিটি। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ বাহার উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল আহমেদ। পরে ২০২০ সালের শুরুতে জেলা রিপোটার্স ইউনিটির অনুমোদন লাভ করে সংগঠনটি। ২০১৮ সালে নিতেশ দেবকে সভাপতি এবং সুশীল চন্দ্র দাসকে সাধারণ সম্পাদক করে লাখাই উপজেলা অনলাইন প্রেসক্লাবের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সুশীল চন্দ্র দাস সভাপতি, বিল্লাল আহমেদ সাধারণ সম্পাদক ও মহিউদ্দিন আহমেদ রিপনকে সাংগঠনিক করে সাংবাদিক ফোরাম লাখাই শাখা গঠন করা হয়।
স্থানীয়ভাবে লাখাই উপজেলায় সাংবাদিক সমাজের বিস্তার লাভ করছে দিন দিন। বিষয়টিকে অবশ্যই ইতিবাচক চিন্তায় রাখা প্রয়োজন। মাঠের সাংবাদিকরা এখন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে কাজ করছেন। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অনুসন্ধানী রিপোর্টের সংখ্যাও। সাংবাদিকদের মাধ্যমে উঠে আসছে নানা সমস্যা, সম্ভাবনা আর দুর্নীতির তথ্য। ভাল কাজে অবশ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়টিও থাকে। এমন সময়ে সকল সাংবাদিককে ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই। সবাই একই ছাতার নিচে অবস্থান করবেন শীঘ্রই; এমন প্রত্যাশা করছি।
লেখক : সাংবাদিক