নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জ সদর আধুনিক ২৫০ শয্যার হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সুস্থ হওয়ার বদলে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। রোগী সেবায় দায়িত্বরত ডাক্তার ও নার্সরা এ ব্যাপারে উদাসীন। জেলার ৯ উপজেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষের সরকারীভাবে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের প্রধান মাধ্যম এ হাসপাতালটি।
হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মুখলিছুর রহমান উজ্জল জানান, গতকাল রবিবার রাত পর্যন্ত জেলায় করোনায় ১৪৫৪ জন আক্রান্ত হয়ে ১২ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৯৩১ জন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও কেন হাসপাতালে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ সচেতন মহল।
সরেজমিনে, পরিদর্শনকালে আলাপ হয় গাইনী ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্সদের সাথে। তারা জানান, লোকজন এসে সুচিকিৎসা নিচ্ছে। তারা সঠিক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। রোগীর সাথে আসা ইয়াসমিন আক্তার জানান, গাইনী ওয়ার্ডের এ অবস্থায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরেক রোগীর স্বজন সুফিয়া খাতুন বলেন, এ পরিস্থিতির মধ্যে রোগী নিয়ে এসে বিরাট সমস্যা ও আতঙ্কে আছি। ওয়ার্ডে দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। নাকে চেপে ধরে বসে আছি। রোগীর প্রয়োজনে গেলে নার্সরা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, বসে থাকেন। প্রয়োজনে আমরা নিজ থেকেই যাব। আপনাদের ডাক্তারী করতে হবে না।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে আতঙ্কে আছি। কোন স্বাস্থ্যবিধি নেই। রোগী থেকে আরো যেন রোগী হয়ে যাই না। কিছু অসাধু নার্সের দাপটে মুখ খুলে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না রোগীরা।
অনেকেই অভিযোগ করেন, অসাধু নার্সরা রোগীর কাছ থেকে অবৈধ পন্থায় টাকা নিয়ে চিকিৎসা করেন। টাকা না দিলে সুচিকিৎসা পাওয়া কঠিন। এসব নার্সদের কাছে অনেক ডাক্তাররাও জিম্মি হয়ে আছেন যেন। কারণ তাদের বাসা জেলা শহরে। এছাড়া প্রভাবশালী নার্সরা একই ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছে। প্রভাবের কারণে তারা একই ওয়ার্ডে অবস্থান করে রোগীর কাছ থেকে অবৈধ পন্থায় টাকা ও রোগীর ওষুধ বিক্রি করে হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আবার অনেক নার্স দায়িত্বের প্রতি সম্মান রেখে নিয়মিত রোগীদের সেবা করছেন। তবে এসব নার্সরা প্রভাবশালী নার্সদের কাছে বিরাট অবহেলার পাত্র। অসাধু নার্সদের কারণে এ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।
হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের সিনিয়র গাইনী কনসালট্যান্ট ডা. আরশেদ আলীর সাথে যোগোযোগ করা হলে তিনি জানান, অভিযুক্ত এক নার্সের ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়কের কাছে জানিয়েছেন। তিনি (তত্ত্বাবধায়ক) ব্যবস্থা নিবেন। তিনি জানান, রোগীরা সেবা থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ খুবই আন্তরিক।
হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই রোগী সেবা দেওয়া হচ্ছে। এখানে কোন নার্স রোগী সেবায় টাকা নিয়েছে লিখিত অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা রোগী সেবার ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছি।