স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচন কমিশনের রূপরেখা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে সিলেট বিভাগের প্রাচীন নগর প্রশাসন হবিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। লাখো মানুষের শহর হবিগঞ্জ পৌরসভা পাবে তার নতুন প্রতিনিধিদের। ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হবিগঞ্জ পৌরসভা আগামী বছরে পদার্পন করবে ১শ’৪০ বছরে। সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার খ্যাত প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদে সমৃদ্ধ প্রথম শ্রেনীর পৌরসভার জনপ্রতিনিধিও বিশেষ মর্যাদা লাভ করেন। আর এই বিশেষ মর্যাদার জনপ্রতিনিধি হতে হবিগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের প্রতিটি অলিগলি সরগরম নির্বাচনী আড্ডায়।
এখনও তফসিল ঘোষণা না হলেও প্রথম ধাপেই হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এরই মাঝে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা। উভয়েই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার কৌশল নিয়ে ব্যস্ত। শুভাকাক্সক্ষীদের মুখে শোনা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ দলীয় ৬ এবং বিএনপি দলীয় ৩ প্রার্থীর নাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগাম জন সংযোগ শুরু করেছেন। হবিগঞ্জে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাই নানা উপলক্ষকে সামনে রেখে জনগনের কাছাকাছি থাকছেন। নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। নিজেদের যোগ্য প্রার্থী হিসেবে প্রমান করার চেষ্টা করছেন। আলোচনা সমালোচনা চলছে; সংকট সময়ে কোন প্রার্থী নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে থেকেছেন ঘরে আর কাকে বিপদে পাশে পেয়েছেন ভোটাররা। প্রার্থীরা গ্রহনযোগ্যতা বাড়াচ্ছেন নিজ নিজ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় হাই কমান্ডের কাছে। কারন দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন একটি বড় বিষয়। সেটা আওয়ামী লীগের হোক; কিংবা বিএনপির।
তবে এখন পর্যন্ত যারা মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন তাদের সকলেই বড় দুটি রাজনৈতিক দল তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। জাতীয় পার্টি, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর হবিগঞ্জ জেলায় সংগঠন থাকলেও এখন পর্যন্ত তাদের কোনো প্রার্থী আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে ঘোষনা দেননি তবে ইসলামী আন্দোলন হবিগঞ্জ জেলার সাধারন সম্পাদক ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির (ব্যকস) সভাপতি শামসুল হুদা ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় গণসংযোগ করছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান মেয়র, বিগত উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও পৌর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, বিগত উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সৈয়দ কামরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মর্তুজ আলী। নতুন মূখ হিসেবে আসছেন হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা নূর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও টানা তিনবারের নির্বাচিত পৌর মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ। তিনি গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে হবিগঞ্জ ৩ সদর-লাখাই-শায়েস্থাগঞ্জ আসনে নির্বাচন করায় মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তিতে দলীয় সিদ্ধান্তে আর উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। এবারও তিনি বলেছেন দল চাইলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন; দল না চাইলে করবেন না। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বিগত উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শ্রমিকদল নেতা ইসলাম তরফদার তনু ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক সেলিম।
কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে বিগত নির্বাচনে নির্বাচিত ও পরাজিত সকল প্রার্থীই মাঠে রয়েছেন। সাথে সবকটি ওয়ার্ডে নতুন মুখেরও আগমন ঘটেছে। কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন না হলেও বেশির ভাগ সম্ভাব্য প্রার্থীই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী বা সমর্থক। কয়েকজন অবশ্য নিজেদের নির্দলীয় ব্যক্তি হিসেবে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন, গ্রহনযোগ্যতা বাড়াচ্ছেন।
এবারের নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের অঙ্গীকারের মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে হবিগঞ্জের জলাবদ্ধতা ও ড্রেনেজ সমস্যা। এরপর রয়েছে পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন, পৌরসভার পুকুরগুলো পুণরুদ্ধার ও জলাশয় সংরক্ষন, পৌরসভার রাস্তা সংস্কার, সড়কবাতির আওতায় পুরো পৌরসভা আনয়ন, শিশু কিশোরদের জন্য পার্ক, খেলাধুলার মাঠ ও বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন, যুব সমাজের অবক্ষয় তথা মাদকাসক্ত ও ইভটিজিং রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন, শহরের টমটম, ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও প্যাডেল চালিত রিক্সার নিয়ন্ত্রন আরোপ করে যানজটমুক্ত শহর গড়া প্রভৃতি। আর বিগত নির্বাচনে জয়ী ব্যক্তিরা এসব সমস্যার সমাধানে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন বা কেন সমাধান করতে পারেননি তার ফিরিস্থি দিচ্ছেন। পৌরবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন আবার নির্বাচিত হতে পারলে এসব সমস্যা আর থাকবে না। অপরদিকে, অন্যান্য প্রার্থীরা বিগত পরিষদের এসব সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতা ও তারা কিভাবে এসব সমস্যার সমাধান করে আধুনিক পৌরসভা উপহার দিবেন সেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন পৌরবাসীদের। তাই এই মুহুর্তে সবচেয়ে সম্মানের স্থানে আছেন পৌরসভার ভোটাররা।