স্টাফ রিপোর্টার, বানিয়াচং থেকে ॥ বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জ জেলা শহরে যেতে খোয়াই নদীর ওপর নির্মিত সাতটি বেইলি সেতু বেহাল অবস্থায় রয়েছে।
বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে এসব সেতু দিয়ে যান চলাচল করছে। সেতুগুলো দিয়ে প্রতিদিন শত শত হালকা ও ভারী যানবাহন চলাচল করে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও গাড়িচালকরা বলছেন, সেতুগুলো সংস্কার অথবা নতুন গার্ডার সেতু করা না হলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সরেজমিন দেখা যায়, সেতুগুলোর মধ্যে লাগানো অনেক স্ল্যাব উঠে গেছে, অনেক স্থানে স্ল্যাব ভেঙে গেছে। এ ছাড়া সেতুর পিলার কিছু কিছু স্থানে ভেঙে গেছে। সেতুগুলোর স্থায়ী পিলার দুর্বল হয়ে পড়ায় লাগানো হয়েছে আলাদা লোহার পিলার। কোনো কোনো স্থানে সেতুগুলোর রেলিং পর্যন্ত ভেঙে গেছে। সেতুর পাশে সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে লেখা ৫ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ। ঝুঁঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ওই সেতুগুলো দিয়েই চলাচল করছে শত শত পরিবহন। যার ফলে সেতুগুলোর ওপরে উঠলে কাঁপতে শুরু করে।
যদিও মাঝেমধ্যে উঠে যাওয়া স্ল্যাব মেরামত করে দিচ্ছে সড়ক বিভাগ। তবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবারও সেতুগুলো পুরোনো রূপে ফিরে আসে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় চরম ঝুঁঁকি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনসহ সাধারণ মানুষকে।
সিএনজি অটোরিকশাচালক আহম্মদ আলী বলেন, ‘আমি প্রতিদিনই আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং সড়কে সিএনজি অটোরিকশা চালাই। সেতুগুলোতে একত্রে কয়েকটি যানবাহন উঠলেই কাঁপতে শুরু করে।’ রাজু আহমেদ নামে অন্য এক চালক বলেন, ‘সেতুগুলোর কিছু কিছু অংশে স্ল্যাব উঠে যাওয়ায় অনেক সময় গাড়ির চাকা আটকে যায়।’
ট্রাকচালক মহিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ট্রাক দিয়ে মালামাল আনা-নেওয়া করি, কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঝুঁঁকিপূর্ণ সেতুগুলো দিয়ে ট্রাক চালাই।’ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জে খোয়াই নদীর ওপর নির্মিত বেইলি সেতু, বানিয়াচং সড়কের রতœা ও শুঁটকি সেতু, নবীগঞ্জ সড়কের বালিখাল সেতু, চুনারুঘাট উপজেলার কাজিরখিল সেতুও ঝুঁঁকিপূর্ণ।
সুশীলসমাজের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন নদীর ওপর নির্মিত বেইলি সেতুগুলো দিয়ে পণ্য পরিবহন যাতায়াতের ফলে এগুলো ঝুঁঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।’ অনেক পুরোনো এই সেতুগুলো ভেঙে আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
জেলা মটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায় বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে আমাদের পরিবহন চলাচল করে। প্রতিদিনই কয়েক হাজার পরিবহন চলাচলের ফলে সেতুর অবস্থা অনেকটা খারাপ হয়ে যায়। সেজন্য অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। ঝুঁকি ও দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত এসব সেতু ভেঙে আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন।’
হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘ঝুঁঁকির পাশাপাশি এসব বেইলি সেতু রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তবে সাতটি সেতুই অপসারণ করে আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য আমব্রেলা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেইলি সেতু দিয়ে ৫ টনের অধিক ওজনের যানবাহন চলাচলে সক্ষম নয়। যে কারণে প্রতিটি সেতুর প্রবেশমুখে ৫ টনের অধিক পরিবহন প্রবেশ নিষেধ দিয়ে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।’