প্রধান প্রতিবেদক ॥ হবিগঞ্জে গত বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে ১৪ হাজার ৭৬০ টন ধান কেনার জন্য সরকার প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বেঁধে দেওয়া তিন মাস সময় প্রায় শেষ হয়ে আসলেও এ পরিমাণ ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য সরকারি ধান সংগ্রহ কেন্দ্রের নিয়ম-কানুন ও ময়েশ্চোর (আদ্রতা) সম্পর্কে কৃষকদের সংশয় এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অন্তরায়।
গত বোরো মৌসুমে হবিগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৭ হেক্টর জমি থেকে ৫ লাখ ২০ হাজার ৬৫০ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। সরকারি হিসাবে এ পরিমাণ ধানের দাম ১ হাজার ৬৬৬ কোটি আট লক্ষ টাকা।
গত ১৮ মে থেকে সরকারি গুদামে ৩২ টাকা কেজি অর্থাৎ ১ হাজার ২৮০ টাকা মণ বোরো ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
৩১ আগস্ট পর্যন্ত জেলার ৯টি উপজেলা থেকে ১৪ হাজার ৭৬০ টন ধান গ্রহণ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। গতকাল পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫১.৩৭ শতাংশ অর্থাৎ ৭ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
স্নাতকোত্তর শেষ করে কৃষি কাজে যোগ দেওয়া ফারুক আহমদ বলেন, ‘সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ১৪ শতাংশ (ময়েশ্চার) শুকনা ধান নেওয়া হয়। কিন্তু একজন কৃষক সেখানে ধান নিয়ে গেলে কর্মকর্তারা বলেন, ১৫/১৬ শতাংশ শুকনা আছে। অর্থাৎ, ধানটা ফেরৎ দেওয়া হল। এটা তো কৃষকের পক্ষে ভোগান্তির।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে ধান বিক্রির প্রক্রিয়ায় এরকম জটিলতা থাকায় প্রান্তিক চাষীরা মিল মালিক বা হাটে-বাজারের পাইকারদের কাছেই ধান বিক্রি করেন। সরকার যদি সহজ উপায়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে, তাহলে কৃষকরা লাভবান ও আগ্রহী হবে।’
বানিয়াচং উপজেলার ষাটোর্ধ্ব কৃষক ও শিক্ষক জুনায়েদ আহমেদ বলেন, ‘ধান সংগ্রহের নিয়ম-কানুন ও দর নির্ধারণ করার আগে কৃষকদের মতামত জানার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয় না। একটা অফিস করে দেওয়া হলো। দাম নির্ধারিত হয়ে গেল। এই চক্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তাহলে কৃষকরা সরকারকে ধান দিতে আগ্রহী হবে।’
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কৃষক তুহেল মিয়া, শাহনুর মিয়া, রাসেল মিয়া ও পায়েল মিয়া সরকারি গোদামে ধান বিক্রি করেন না। কারণ জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, ঘরে ধান রাখার জায়গা নেই; আর শুকনো ধান সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পর যন্ত্র দিয়ে আদ্রতা মেপে ফেরৎ দেওয়া হয়। সেজন্য স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে ধান বিক্রি করে সাথে সাথে তারা টাকা নিয়ে নেন।
লক্ষ্যমাত্রা শুধু কাগজে-কলমেঃ
হবিগঞ্জে বোরো ধানের সাথে এক নিয়ম ও সময়ে ৪৫ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল এবং ৪৪ টাকা কেজিতে আতপ চাল সংগ্রহ শুরু হয়। জেলার ১৫টি ব্রয়লার থেকে ১৪ হাজার ৯৬৬ টন সেদ্ধ চাল ও ৪১টি ব্রয়লার থেকে ৪ হাজার ৮৪৪ টন আতপ চাল সরকারকে দেওয়ার কথা।
কিন্তু তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৬৪.৮৬ শতাংশ অর্থাৎ ১০ হাজার ২২৬ দশমিক ৪৭০ টন সেদ্ধ চাল তাঁরা দিতে পেরেছে। এখানেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি।
এদিকেÑ চাল সংগ্রহে আগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারার পরও দ্বিতীয় দফায় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বর্ধিত করেছে খাদ্য বিভাগ। আর সংগ্রহের সময়ও অতিবাহিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ নিশ্চিতভাবে শুধু কাগজে-কলমে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হল।
এ অসঙ্গতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে খাদ্য বিভাগ খোয়াইকে জানায়, যে ৫৬টি ব্রয়লার থেকে চাল সংগ্রহ করা হয় তারা কে কতটুকু পরিমাণ চাল দিবেন তা আগে থেকেই নির্ধারিত করা থাকে। কিছু ব্রয়লার বরাদ্দের বিপরীতে পুরোটা দিতে পেরেছেÑ কিছু ব্রয়লার দিতে পারেনি, চেষ্টায় আছে। যারা পুরোটা দিয়েছেন তাদের কারণে লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে হয়েছে। মূলত এতটা সংগ্রহ করা সম্ভব না।