হবিগঞ্জে সি আর দত্ত বীরউত্তমের নামে স্থাপনা নামকরনের দাবী

ভিতরের পাতা

মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪ নং সেক্টরের কমান্ডার কর্ণেল চিত্ত রঞ্জন দত্ত পরবর্তিতে মেজর জেনারেল হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত হবিগঞ্জের সন্তানের পরলোকগমনে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল। সংবাদপত্রে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য পাকিস্তান সরকার কর্তৃক পুরস্কারপ্রাপ্ত সি আর দত্ত ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নিজ জেলা হবিগঞ্জে ছুটিতে থাকাকালীন অবস্থায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মনিয়োগ করেন। মুক্তিবাহিনীর জন্মভূমি খ্যাত হবিগঞ্জের সন্তান তৎকালীন সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই নদী ও শায়েস্তাগঞ্জ রেল লাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেটের ডাউকি সড়ক পর্যন্ত এলাকা নিয়ে গঠিত ৪নং সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধের কলাকৌশল নির্ধারন করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করতে ভূমিকা রাখেন। চা বাগানে গেরিলাযুদ্ধ পরিচালনার কলাকৌশল মূলতঃ সি আর দত্তই প্রণয়ন করেন। প্রথমে হবিগঞ্জের রশিদপুর থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করলেও কৌশলগত কারনে পরবর্তীতে মৌলভীবাজারে অবস্থান করে সিলেট অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু তাঁকে বীরউত্তম উপাধিতে ভূষিত করেন। যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বীরত্বের পুরস্কার।
জীবন সংকেত নাট্যগোষ্টির কার্যকরী সদস্য অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশীর সন্তান ও হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সি আর দত্ত দেশ স্বাধীনের পর বিডিআর প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন ও এর প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণট্রাস্ট ও বিআরটিসির চেয়ারম্যানসহ অনেক বেসামরিক দায়িত্ব অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। ১৯৮৪ সালে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথেও জড়িত ছিলেন। তিনি সময় সুযোগ পেলেই হবিগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি এলাকা ও চুনারুঘাটে বসবাসরত আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে আসতেন। এখনও হবিগঞ্জ শহরে ও চুনারুঘাটে সি আর দত্তের অনেক আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রয়েছেন। যার বীরত্বে এদেশের জন্ম তাঁর মরদেহ এদেশের মাটিতে এনে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য হবিগঞ্জের সন্তান ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার কেন্দ্রীয় আজীবন সদস্য অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল সরকারের নিকট দাবী জানান।
উল্লেখ্য সি আর দত্তের মরদেহ বাংলাদেশে আনার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে কবিতা দাশও। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সংবাদপত্রকে এ তথ্য ইতোমধ্যে দিয়েছেন। যেহেতু তাঁর সন্তানদেরও ইচ্ছে সি আর দত্তের মরদেহ বাংলাদেশে আনার তাই সরকারের উচিত বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখা।
অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল আরো বলেন, ঢাকার কাঁটাবন থেকে কারওয়ান বাজার সিগন্যাল পর্যন্ত সড়কটি ‘বীরউত্তম সি আর দত্ত’ সড়ক নামে নামকরণ করা হলেও তার পৈত্রিক ভিটা হবিগঞ্জের কোনো স্থাপনা বা সড়ক এই জাতীয় বীরের নামে নেই। তিনি এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহন করার জন্যও হবিগঞ্জ সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জের সংসদ সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এডভোকেট মোঃ আবু জাহিরসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *