হবিগঞ্জ নার্সিং ও মিডওয়াইফারী কলেজে ‘লুটের’ টাকা ৫ বন্টন

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ নার্সিং ও মিডওয়াইফারী কলেজে ভর্তি ও মেডিকেল টেস্ট বাবদ শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে চারগুণ টাকা লুটে নেওয়ায় অভিযুক্ত ৩ প্রশিক্ষক ও ২ কর্মচারী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অব্যাহত শিক্ষার্থী আন্দোলনের মুখে গত মঙ্গলবার তারা কলেজ থেকে পালিয়ে গিয়ে গতকাল পর্যন্ত দায়িত্বে ফিরেননি।
অভিযুক্তরা হলেন, হবিগঞ্জ নার্সিং ও মিডওয়াইফারী কলেজের তিন প্রশিক্ষক কল্পনা রাণী ঘরামী, সালমা বেগম ও সম্পা রাণী দাশ, উচ্চমান সহকারি মতিউর রহমান এবং অফিস সহকারি সিরাজুল হক সুজন।
এদিকে, ১৮ আগস্ট শুরু হওয়া ২০ দফা দাবির আন্দোলন গত বুধবার এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। নার্সিং ও মিডওয়াইফারীর শিক্ষার্থীরা টানা ১২ দিন ধরে শ্রেণিকক্ষে না গিয়ে কলেজ অভ্যন্তরের মূল ফটকে বসে আন্দোলন করছেন।
গতকাল শনিবার বিকাল ৩টায় সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৩০০ ছাত্রছাত্রী দাবি-দাওয়া সংবলিত ফেস্টুন হাতে লাগাতার শ্লোগান দিচ্ছে। ফেস্টুনগুলোতে “দফা এক-দাবি এক, স্বৈরাচারের পদত্যাগ”; “দেশপ্রেমের শপথ নিন, দুর্নীতিবাজকে বিদায় দিন”; “কল্পনা ম্যাম ও সালমা ম্যামের বিচার চাই”সহ বিভিন্ন শ্লোগান লেখা।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রছাত্রীরা জানায়, নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তর ৪ হাজার ৪১০ টাকা ভর্তি ফি নির্ধারণ করেছে। কিন্তু হবিগঞ্জ নার্সিং ও মিডওয়াইফারী কলেজে অন্যায়ভাবে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ভর্তি ফি নেওয়া হয়। দুই/তিনশ’ টাকা খরচের মেডিকেল টেস্ট বাবদ টাকা নেওয়া হচ্ছে দেড় হাজার। টাকা দিলেও অনেকের টেস্ট হয়নি। শিক্ষার্থীদের থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা উচ্চমান সহকারি মতিউর রহমান ও অফিস সহকারি সিরাজুল হক সুজন একত্রিত করে রাখেন। পরে পাঁচ বন্টন হয়।
এ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সঙ্গে অকথ্য ভাষার ব্যবহার, পরীক্ষায় অকৃতকার্য করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রতারণা, অন্যায়ের ব্যাপারে মুখ খুললেই ডেকে নিয়ে ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি, মানবিক পরিস্থিতিতে ছুটি চাইলে রূঢ় ব্যবহার এবং আরও নানা ব্যাপারে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে।
আন্দোলনরত এবিএম আফফান, আকাশ মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম, হাফিজা সুলতানা, রিনা, হোসাইন তালুকদার ও হিমু আক্তার খোয়াইকে জানান, হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ নুরুল হক বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। কল্পনা রাণী ঘরামী, সালমা বেগম, সম্পা রাণী দাশ, মতিউর রহমান ও অফিস সহকারি সিরাজুল হক সুজনের পদত্যাগের এক দফা দাবি তাঁর সামনেও উপস্থাপন করা হয়েছে।
এবিএম আফফান খোয়াইকে বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেখে একবার সালমা ম্যাম মুসলমান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের বিভক্তি তৈরি করে অশান্তি করতে চেয়েছিলেন। হিন্দু শিক্ষার্থীরা প্রার্থনার স্থান চাইলে তিনি এ অপকর্ম করেন। কিন্তু আমরা ছাত্রছাত্রীরা তাঁর ফাঁদে পা দিইনি।’
গতকাল বিকাল ৩টা থেকে প্রায় আধাঘন্টা সময় কলেজে অবস্থান করে অভিযুক্তদের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কলেজের কোথাও তাঁদের খোঁজে পাওয়া যায়নি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, গত মঙ্গলবার আন্দোলন চলাকালে তাঁরা কৌশলে পালিয়ে যান। এরপর আর কর্মস্থলে আসেননি।
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ নুরুল হক খোয়াইকে জানান, তিনি কলেজে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন এবং ছাত্রছাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন। তবে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার তাঁর নেই।
এদিকে, লাগাতার আন্দোলনে কলেজ স্থবির হয়ে পড়লেও উদাসীনতা দেখাচ্ছে ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে কলেজে সবরকম নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ছাত্রছাত্রীদের।
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আমিনুল ইসলাম সরকারের মুঠোফোনে বার বার কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মোমেন উদ্দিন চৌধুরী খোয়াইকে বলেছেন, ‘আমরা সার্বিক পরিস্থিতি বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলকে জানানোর দায়িত্ব পালন করব। বাকী ব্যবস্থা সেখান থেকে নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *