হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজে সোয়া কোটি টাকা লুট

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে বইপত্র ও মালামাল কেনায় ১৫ কোটি টাকা লোপাটের পর এবার আরও কয়েকটি খাতে সোয়া কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ সুনির্মল রায়ের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারীরা শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে এ তথ্য দেয়।
অধ্যক্ষ ও কো-অর্ডিনেটরের পদত্যাগের জন্য বেঁধে দেওয়া ৭২ ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ায় আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা গতকাল মঙ্গলবার অধ্যক্ষের কক্ষসহ মেডিকেল কলেজের কয়েকটি দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
পরে ছাত্রছাত্রীরা মেডিকেল কলেজের ভিতরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে চলতি অর্থবছরে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, সর্বশেষ (২০২৩-২৪) অর্থবছরে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে নিরাপত্তার জন্য ৮০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বাস্তবে এ খাতে কোন ব্যয়ের তথ্য কারও জানা নেই; ৩/৪টি বই উপহার দিয়ে পুরস্কার বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩ লাখ টাকা; প্রতিষ্ঠানের টয়লেটসহ সর্বত্র ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়িÑ কিন্তু পরিচ্ছন্নতা খাতে আরও ৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল; কিন্তু মেডিকেল কলেজ এ খাতেও ২৮ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়েছে। এছাড়া ইন্টারনেট বাবদ ৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে; অথচ ক্যাম্পাসে ইন্টারনেটের মাত্র দু’টি রাউডার ব্যবহার হচ্ছে।
আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রী আরও জানায়, ছাত্রকল্যাণ খাতে প্রতিজনের নিকট থেকে ২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। সেই টাকা কোথায় যায় তা শিক্ষার্থীদের জানা নেই। মেডিকেল কলেজে নেই কোন পরিবহন ব্যবস্থা সেখানে গাড়ির জ্বালানি বাবদ খরচ ৫ লাখ। কোন প্রতিযোগিতা আয়োজন না করেও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য ২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আর ছাত্রছাত্রীরা ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয় করেছে নিজেদের থেকে উত্তোলন করা চাঁদায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা শিক্ষকদের নিয়মিত উপস্থিতি ও ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধসহ ৮ দফা দাবি জানাচ্ছেন। নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকায় প্র্যাকটিক্যাল চিকিৎসার অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় অতিরিক্ত ফিও আদায় করছে। এখন একটাই দাবি, ব্যর্থতার দ্বায় স্বীকার করে অধ্যক্ষ ডাঃ সুনির্মল রায়কে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
এছাড়া শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে তৈরি হওয়া নানা জটিলতার জন্য প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে তাঁরা অধ্যক্ষ ও কো-অর্ডিনেটরের পদত্যাগের দাবি জানান। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে। এর মধ্যে ভ্যাট ও আয়কর খাতে সরকারি কোষাগারে জমা হয় এক কোটি ৬১ লাখ টাকা ৯৭ হাজার ৭৪৮ টাকা। ১৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮১ হাজার ১০৯ টাকা মালামাল ক্রয় বাবদ ব্যয় দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে ওই মালামালের মূল্য পাঁচ কোটি টাকার বেশি নয়। বাকি টাকার পুরোটাই ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে। এনিয়ে দুর্ণীতি দমন কমিশনের মামলা চলমান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *