স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রায় ত্রিশ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা গ্রহণের প্রধান মাধ্যম হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালকে ঘিরে শেষ নেই অভিযোগের। নামে ২৫০ শয্যা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সেবা মিলছে না ৫০ শয্যারও। তার উপর করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে আরো কমে গেছে সাধারণ রোগীদের মাঝে সঠিকভাবে সেবা দান।
জানা গেছে, হাসপাতালের ৮তলা ভবনের ২য় তলায় চলছে করোনা চিকিৎসা। অবকাঠামোগত সমস্যা নিরসন হলেও প্রশ্ন আছে সেবার মান নিয়ে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগ কিংবা অপারেশন থিয়েটারে নুন্যতম সেবা পেতে হলেও টাকা খরচ করতে হয় সাধারণ সেবা গ্রহীতাদের। সুতা থেকে ওষুধ সবই কিনতে হয় রোগীদের। অভিযোগ উঠেছে, সরবরাহ না থাকার অজুহাতে ফায়দা লুটছে একটি সিন্ডিকেট। যা উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নজরে থাকলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে ওষুধ ও সরঞ্জাম মজুদ থাকার কথা থাকলেও হাসপাতালে এসে এগুলো গায়েব হয়ে যায় বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
সূত্র জানায়, গাইনী ওয়ার্ডে নরমাল ডেলিভারী হলে নেওয়া হয় ২ হাজার থেকে থেকে ৫ হাজার টাকা। সে টাকা নার্স এবং আয়ারা গ্রহণ করেন বকশিস হিসেবে। এ বিষয়টি নিয়ে এলাকাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা হলেও কর্তৃপক্ষ রয়েছে নিরব ভূমিকায়।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জরুরী বিভাগ ও অটিরুমের হালচিত্র। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুর্ঘটনায় বা সংঘর্ষে আহত রোগী ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মূমুর্ষ রোগীরা এখানে আসেন চিকিৎসা নিতে। রোগি আসার সাথে অবস্থা দেখে ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেন কর্তব্যরত ডাক্তার। গ্লাভস, সুতা, ব্যন্ডিস, ব্যাথা নাশক ইনজেকশনসহ বিভিন্ন ওষুধ বাহির থেকে সংগ্রহ করতে হয় রোগীর স্বজনদের। হাসপাতাল থেকে এসব জিনিসপত্র দেয়ার কথা থাকলেও সরবরাহ নেই বলে অজুহাত দেখান কর্তব্যরতরা। এসব ব্যয়বহুল ওষুধ ক্রয় করতে হিমসিম খেতে হয় তুলনামুলক গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের। একই অবস্থায় অপারেশন থিয়েটারের। ছোটখাটো অপারেশনসহ সকল ধরণের অপারেশনে প্রয়োজনীয় ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হয় রোগীর স্বজনদের। এখানেও সরবরাহ নেই বলে চালিয়ে দেন সংশ্লিষ্টরা। ওটিরুমের ড্রেসিং শয্যায় ব্যান্ডিস, গ্লাবস, হ্যান্ড সেনিটাইজার, স্পিরিট, পভিসেপ, ব্যাথানাশক ইনজেকশনসহ সব বাইরে থেকে সরবরাহ করতে হয় রোগীদের। তাছাড়া ড্রেসিং সেবা পেতে ব্রাদার কিংবা নার্সদের দিতে হয় বাড়তি উৎকোচ। এ যেনো নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। বকশিস দিলে ড্রেসিং হয় আর না দিলে থাকে দায়সারা ভাব।
সম্প্রতি সদর উপজেলার বড়বহুলা গ্রামের হেলাল মিয়া গাইনী ওয়ার্ডে যান তার স্ত্রীকে নিয়ে। নার্স এবং আয়া নরমাল ডেলিবারি করে দাবী করেন ২ হাজার ৫’শ টাকা। হেলাল জানান, কেটগার্ড ওয়ান সুতাসহ বিভিন্ন ধরণের প্রায় ১৫০০ টাকার উপকরণ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে তাকে। হেলালের মতো অসংখ্য রোগীকে এভাবেই অটিরুম কিংবা জরুরী বিভাগে সেবা গ্রহণ করতে প্রয়োজনীয় মেডিসিন কিনতে হয় বাইরে থেকে।
সুমন মিয়া নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, আমি আমার ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে আসছি। আঘাত পেয়ে মাথা ফেটে গেছে তার। জরুরী বিভাগে আসার পরই একটি কাগজে ইনজেকশন, সুতাসহ লিখে দেয়া আরও কিছু মেডিসিন কিনতে হয়েছে আমাকে। হাসপাতাল থেকে দেয়ার কথা বললে ব্রাদার জানান হাসপাতালে সাপ্লাই নেই।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক অফিসার (আরএমও) ডা. শামীমা জানান, হাসপাতালে সকল ধরণের মেডিসিনসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ থাকার কথা। রোগীরা সেবা থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ খুবই আন্তরিক বলে দাবি করেন তিনি।