এমন ছাত্রলীগ দেখতে চাই না

শেষ পাতা

মোঃ নূরুল হক কবির ॥ শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন, জাতির মুক্তির স্বপ্নœদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। জন্মের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গনঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধীকার আন্দোলনের সফল সাহসী সংগঠন ছাত্রলীগ। আবেগ, ভালবাসা, উচ্ছাস, ছোটখাট সহ অসংখ্য ইতিহাস জড়িত প্রানের সংগঠন ছাত্রলীগের সাথে। ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীর মধ্যে আছে তরুন মুজিবের নান্দনিকতা ও আদর্শ, আছে ক্ষুদিরামের প্রত্যয়, আছে সুকান্তের অবিচল চেতনা। ছাত্রলীগের রয়েছে সোনালি অতীত, প্রশংসনীয় ঐতিহ্য। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সর্বত্রই ছাত্রলীগের ছিল অগ্রণী ভূমিকা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রসংগঠন হচ্ছে ছাত্রলীগ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও একসময় ছাত্রলীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। ক্ষমতাসীন দলে এখনো অনেক নেতা রয়েছেন, রাজনীতিতে যাঁদের প্রবেশ হয়েছিল ছাত্রলীগের হাত ধরে। ছাত্রসংগঠনটির গঠনতন্ত্রে ঘোষিত তিন মূলনীতি হলো শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। কিন্তু বর্তমান ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে আমরা লজ্জিত, লজ্জিত সমগ্রদেশ। এই তিন মূলনীতির কিছু কি অবশিষ্ট আছে? যদি এসব মূলনীতির ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তাঁরা ধর্ষনের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করে কী করে?
ভাবা যায়, স্বামীসহ গৃহবধুকে তুলে নিয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে সেই গৃহবধূূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগেরই কিছু কুলাঙ্গার? সিলেটের পবিত্র মাটি আজ কলঙ্কিত। ১২৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজে এই কুলাঙ্গাররা আজ থেকে অপরাধ করছে না। গত ১০ বছরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছেন ১১ কর্মী। আট বছর আগে এই ছাত্রলীগ কর্মীরাই পুড়িয়ে দিয়েছিল বিশেষ স্থাপত্য নকশার ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসটি। তখন যদি লাগামটেনে ধরা হতো তাহলে আজ এমন কলঙ্কের কালীমা ছাত্রলীগের হতো না। কলেজ ক্যাম্পাসে আগুন দিয়ে এঁরা ঘুরে বেড়াতো বুক উচিয়ে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বলে সারাদিন কথা বলবেন আর নারী ধর্ষন সহ শিক্ষাঅঙ্গনের পরিবেশ নষ্ট করবেন তা মেনে নেয়া যায় না। নানারকম অনিয়মে যখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন জড়িয়ে যায়, তখন সেটা আপার (শেখ হাসিনা) জন্য খুবই বিব্রতকর। আশা করি, ছাত্রলীগের সদস্যরাই আগামী দিনের নেতা হবে, তারাই যদি অল্প বয়সে-তরুণ বয়সে কোন অসৎপথে যায় ধর্ষন কিংবা দুর্নীতিতে জড়ায়, সেটা অশুভ সংকেত।
শেখ হাসিনার একার ইমেজ দিয়ে কি দেশ চলবে? সকলের সম্মিলিত ভাবমূর্তি দিয়ে দল এবং দেশ চালাতে হবে। কারন ছাত্রলীগকে দূর্বল করতে পারলেই শেখ হাসিনাকে দূর্বল করা সম্ভব।
ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেখানে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। বন্ধ থাকা ছাত্রাবাস তাহলে কোন খুঁটির জোরে তারা দখল করেছিল? শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি- ছাত্রলীগের স্লোগান হলেও বারবার কেন তারা অপরাধের কারণে সংবাদমাধ্যমে খবর হয়ে আসছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। ধর্ষকের কোনো দল থাকতে পারে না। তারা কোনোভাবেই রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পেতে পারে না।
যাইহোক আমি চাই, গৃহবধূ ধর্ষণের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, যা অন্য দুর্বৃত্তদের কাছে বিশেষ বার্তা পৌঁছিয়ে ছাত্রলীগকে কলঙ্কমুক্ত করবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *