মোঃ মামুন চৌধুরী ॥ ছয় ইউনিয়ন নিয়ে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা গঠিত। এই উপজেলাতে প্রায় ২ লাখ লোকের বসবাস। হাওরবেষ্টিত এ উপজেলার জনগণের ভরসা লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু নানা সমস্যায় জর্জরিত হাসপাতালটি। এই হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন অকেজো হয়ে আছে আট বছর ধরে। কোনো রোগীর এক্স-রে করার প্রয়োজন হলে যেতে হয় হবিগঞ্জ শহরে। এতে সময় ও অর্থের অভাবে অনেকেই এক্স-রে করাতে পারছেন না। শুধু এক্স-রে মেশিন নয় অন্যান্য পরীক্ষার যন্ত্রপাতিও বিকল হয়ে তালাবদ্ধ রুমে পড়ে আছে। রয়েছে চিকিৎসক সংকট।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৬ একর জমিতে লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপিত হয় ১৯৮১ সালে। শুরু থেকে তৃণমূলের স্বাস্থ্য সেবায় এ হাসপাতালটি ভূমিকা পালন করে আসছিল। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ৩১ শয্যা হাসপাতালে দৈনিক কমপক্ষে ১০০ জন রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। তবে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কম। সেবা নিয়ে প্রায় রোগীই বাড়ি ফিরে যান। দৈনিক খোয়াইয়ের অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাসপাতালে নয়জনের জায়গায় পাঁচজন চিকিৎসক আছেন। গাইনি, সার্জারি, অ্যানেসথেসিয়া ও মেডিসিনের চিকিৎসক নেই। ১৮ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ১৬ জন। পরীক্ষা করার জন্যও নেই পর্যাপ্ত লোকবল।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) কাজী আব্দুল্লাহ কায়সার বলেন, ‘গাইনি চিকিৎসক না থাকায় এখানে সিজার হচ্ছে না। তবে প্রতিমাসে ২৫ থেকে ৩০টি নরমাল ডেলিভারি করানো হচ্ছে।’
কাজী আব্দুল্লাহ কায়সার আরও বলেন, ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার অপেক্ষায় আছে এ হাসপাতাল। নতুন ভবনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। পুরাতন ভবনও সংস্কার করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, নির্মাণ কাজ শেষ হলে নতুনভাবে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান বাড়ানো হবে। এরপর থেকে রোগীদের আর অন্য জায়গায় গিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে না।’
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে এসে সেবা পাওয়া যাচ্ছে। তবে পরীক্ষার জন্য যেতে হয় অন্যত্র।’
লাখাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ বলেন, ‘২০১৮ সালে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম লাখাই আসলে ৫০ শয্যা হাসপাতালের দাবি জানানো হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বরাদ্দে হাসপাতালে নতুন ভবন নির্মাণ প্রায় শেষ। তবে হাসপাতালে পরীক্ষার যন্ত্রপাতির সংকট আছে। আবার অনেক মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। তাই উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে জাইকা প্রকল্পের আওতায় ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেশিন কেনার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন আসবে। দ্রুত পরীক্ষার বাকি মেশিন বরাদ্দের জন্য উপজেলার পক্ষ থেকে লিখিতভাবে দাবি জানানো হয়েছে। ডাক্তার ও স্টাফ সংকট নিরসনে ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। আশা করছি, এসব দ্রুত সমাধান হবে।’