সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের অভাবে দুর্ভোগ

প্রথম পাতা

মোঃ আবু হেনা, আজমিরীগঞ্জ থেকে ॥ আজমিরীগঞ্জ উপজেলার চারটি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে দায়িত্বরত চিকিৎসক দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। এসব মানুষ উপজেলা এবং জেলা সদরে গিয়ে বেসরকারিভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার জলসুখা ও কাকাইলছেও ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং শিবপাসা ও বদলপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন করে এমবিবিএস চিকিৎসক খাতাকলমে দায়িত্বরত থাকলেও বাস্তবে তাঁরা কর্মস্থলে নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, গত বছরের ১৩ জুলাই জুলসুখা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাঃ হাসানুজ্জামান, শিবপাসায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডাঃ হোসেনোজ্জামান এবং পহেলা মার্চ ডাঃ অপূর্ব শর্মা মহালদারকে নিয়োগ দেওয়া হয় বদলপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। তবে কর্মস্থলে এই তিন চিকিৎসকের একজনকেও পাওয়া যায়নি। এছাড়া কাকাইলছেও ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১০ এপ্রিল বদলিজনিত কারণে চিকিৎসক শূণ্য হয় বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বদলপুর, জলসুখা ও শিবপাসা ইউনিয়নে প্রায় দেড় লাখ মানুষের বাস। কিন্তু সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক না থাকায় তাঁরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সরেজমিনে জলসুখা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান গেট বন্ধ থাকায় সেবাগ্রহীতারা ফেরৎ যাচ্ছেন। ভেতরে প্রবেশ করে কাউকে পাওয়া যায়নি। সবকটি কক্ষই ফাঁকা। অনেক খোঁজাখুজির পর কেন্দ্রের দ্বিতল থেকে সেকমো ফারুক আহমেদ নীচে নেমে আসেন। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তিনি জানান, রোগী না থাকায় রুমে গিয়েছিলেন। এখানে প্রতিদিন ৪০-৫০ জন এসে সেবা নেন। ডাক্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে মাঝেমধ্যে আসেন বলে জানান। তবে শেষবার কবে ডাক্তার এসেছিলেন তিনি তা বলতে পারেননি।
শিবপাসা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান গেট লাগানো। ভিতরে প্রবেশ করে দেখা গেল বন্ধ রয়েছে দরজা-জানালাও। এ সময় কোয়ার্টারে থাকা আয়ার সাথে আলাপ হলে তিনি জানান, কেন্দ্রটি দিনরাত খোলা থাকার কথা তাকলেও কয়েকদিন ধরে পরিবার কল্যাণ পরদর্শিকা না থাকায় কেন্দ্রটি বন্ধ আছে। তবে এখানে কোন ডাক্তার নেই। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, তার কেন্দ্রে কোন ডাক্তার নেই।
বদলপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রটি দুই তিনজন করে মহিলা আসছেন সেবা গ্রহনের জন্য কিন্তু কাউকে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা। ওই কেন্দ্রের আয়া রিমা রাণী দাস জানান, তিনি ও পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা জেরিন আক্তার ছাড়া আর কোন লোক নেই। তবে পরিদর্শিকা ছুটিতে যাওয়ায় রিমা একা দায়িত্ব পালন করছেন। চিকিৎসা না নিয়ে অনেকে ফেরৎ যাওয়ার সময় বলেন, এমন সেবা থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
শিবপাসা ইউনিয়নেরর বাসিন্দা শরিফ উদ্দিন জানান, তাঁদের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক নেই। প্রায় সময়ই বন্ধ থাকে কেন্দ্রটি। অসুস্থ হলে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য দশ কিলোমিটার দূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা ৩০ কিলোমিটার দূরে জেলা সদর হাসপাতালে যেতে হয়। জলসুখা ইউনিয়নের সাইদুল আমিন বলেন, ’আমাদের এলাকা থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। জলসুখা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক নিয়মিত আসলে আমরা চিকিৎসা সেবা পেতাম। এখন চিকিৎসাসেবা পেতে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।
বদলপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়েও একই অবস্থার দেখা মেলে। জলসুখা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফয়েজ আহমেদ খেলু জানান, এ ইউনিয়নে একটি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও চিকিৎসক নিয়মিত না আসায় লোকজন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বদলপুর ইউপি চেয়ারম্যান শুশেনজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘এ ইউনিয়নের লোকজন অনেক দুর্গম এলাকায় বসবাস করে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে দুই বছর আগে চিকিৎসক আসতেন। প্রায় দেড় বছর ধরে আসেন না। মানুষের দুর্ভোগের কথা বিভিন্ন সভায় তুলে ধরেছি কিন্তু কাজ হয়নি।’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ইকবাল হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তাঁর মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি দেখবেন বলে খোয়াইকে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ নুরুল হক

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *