স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরে একমাসে অন্তত ত্রিশটি দোকানে চুরির ঘটনায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা গত ৩০ মার্চ সড়ক অবরোধ করেন। তারপরও জেলা সদরে চুরি থামেনি। গত ২৬ জুলাই মাহমুদাবাদ এলাকায় দ্বিতল ভবনের জানালা ভেঙে অস্ত্রধারীদের দ্বারা এনজিও কার্যালয় থেকে টাকা লুটের ঘটনা শহরবাসীকে শঙ্কিত করে।
সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে চৌধুরীবাজারের একটি দোকান থেকে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের সিগারেট খোয়া যায়। এসব ঘটনা সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারন হলেও চোর ধরা পড়েনি। ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়লে আইন-শৃঙ্খলা সভাসহ সর্বত্র আলোচনা-পর্যালোচনা হতে থাকে।
তবে আশ্চর্য্যজনকভাবে হবিগঞ্জ শহরের দৃশ্যপট পাল্টে যায় গত ৫ আগস্টের পর। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজনৈতিক নেতাদের বাসায় ক্ষুব্ধ লোকজন আক্রমণ করে মালামাল লুটে নিতে থাকে। এ অবস্থায় গতকাল পর্যন্ত শহরের কোন সাধারণ ব্যবসায়ীর দোকানে চুরির খবর পাওয়া যায়নি।
৫ আগস্ট রাতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর হবিগঞ্জের সকল পুলিশ সদস্য তোপের মুখে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। তখন থেকে টানা দুইদিন উত্তেজিত লোকজন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার বাসায় আক্রমণ ও লুটপাট চালালে সাধারণ মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়।
ফলে আতঙ্কিত ব্যবসায়ী ও স্বেচ্ছাসেবীরা দোকানপাটের সামনে পাহাড়া দিতে থাকেন। সেজন্য কোথাও চুরির ঘটনা ঘটেনি। ব্যবসায়ী নেতাদের প্রত্যাশাÑ অপরাধ রোধে এখন থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সাধারণ লোকজনও সতর্ক থাকবেন। তবেই দুস্কৃতিকারীরা আর অপরাধ করার সুযোগ পাবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মার্চ মাসে হবিগঞ্জ শহরে টাউন হল এলাকায় ‘গেজেট হবিগঞ্জ’ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তিনবার চুরি হয়। তিনবারে শতাধিক মোবাইলফোন খোয়া যায়। এরপর সিটি টেলিকমসহ আরও কয়েকটি দোকানে চুরি হয়। এ ঘটনায় ২৯ ও ৩০ মার্চ টাউন হল রোড বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা অবরোধ করেন। গত ২৬ জুলাই মাহমুদাবাদ এলাকায় দ্বিতল ভবনের জানালা ভেঙে অস্ত্রধারীরা এনজিও কার্যালয় থেকে টাকা লুটে নেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে চৌধুরীবাজারের একটি দোকান থেকে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের সিগারেট খোয়া যায়। এছাড়া মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরির ঘটনা ঘটতে থাকে।
কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা খোয়াইকে জানান, ২০২৪ সালে হবিগঞ্জ শহরে ব্যাপক হারে চুরি হয়েছে। তবে ৫ আগস্ট থেকে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর অনুপস্থিতিতেও আশ্চর্য্যজনকভাবে চুরির ঘটনা নেই। এর কারণ সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও পাহাড়া।
“কয়েকটি বাসায় আক্রমন ও লুটপাট হওয়ার ঘটনা সরকার উত্থান-পতনের সাথে সম্পর্কিত” উল্লেখ করে ব্যবসায়ী নজরুল খান বলেন, ‘পুলিশ যে অপরাধ বছরের পর বছরেও রোধ করতে পারেনি জনতা সেটি পেরেছে। তাই আগামী দিনে পুলিশের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের সতর্কতামূলক অবস্থান অব্যাহত রাখা চাই।’
পাঁচ থেকে চৌদ্দ আগস্ট রাত পর্যন্ত হবিগঞ্জ শহর ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা কয়েকজন করে দল বেঁধে এলাকাভিত্তিক পাহাড়া দিচ্ছেন। একে অন্যের সঙ্গে নানা প্রসঙ্গে আলোচনায় রাত কাটাচ্ছেন। ফলে কোথাও চুরির ঘটনা ঘটেনি। কালিবাড়ি এলাকার সড়কে ৮ আগস্ট রাত ২টায় একদল তরুণ ক্রিকেট খেলছিলেন। তাঁরা জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে যেন কোন দোকানে চুরি না হয় সেজন্য পাহাড়া বসানো হয়েছে। রাত কাটানোর জন্য ক্রিকেট খেলার পরিকল্পনা মাথায় আসে।
ক্রিকেট খেলারত তাজুল ইসলাম বলেন, “টানা কয়েকদিন হবিগঞ্জ শহরে চুরি হয়নি বিধায় মনে হচ্ছেÑ শুধু প্রশাসনের উপর নির্ভরশীল থাকলে চলবে না। সার্বক্ষণিকভাবে ব্যবসায়ীদের এভাবে সতর্ক থাকলে অপরাধ কমে যাবে।”
এ প্রসঙ্গে হবিগঞ্জ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির (ব্যক্স) সভাপতি মোঃ সামছুল হুদা খোয়াইকে বলেন, ‘উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা রাতে বাসার বাইরে থেকে দোকান পাহাড়া দিয়েছে। ফলে এ সময়ে কোথাও চুরির ঘটনা ঘটেনি। প্রশাসনের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের প্রতিও সবসময় এভাবে সতর্ক থাকার জন্য আহবান জানাচ্ছি।