প্রধান প্রতিবেদক ॥ সারাদেশের মত হবিগঞ্জেও এক মাসের অচলাবস্থা কাটিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ ছাত্রছাত্রী কলেজ-বিদ্যালয়ে ফিরল।
গতকাল রবিবার জেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে বিদ্যালয়ে ফিরছে। সহপাঠিরা দল বেঁধে যাওয়ার পথে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে।
এর আগে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত ৭ আগস্ট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়;কিন্তু উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। গতকাল একযোগে জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলে দেওয়ার পর ছাত্রছাত্রীরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে বিদ্যালয়ে ফিরতে থাকে। দীর্ঘ বিরতি শেষে প্রথম দিন প্রাথমিক মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রী উপস্থিতির হার কাছাকাছি ছিল।
হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, প্রভাতী ও দিবা শাখা মিলে ছাত্রসংখ্যা দেড় হাজার। গতকাল প্রভাতীতে ৩৮৫ জন ও দিবায় ৩৪০ জন উপস্থিত ছিল। মোট উপস্থিতি ৭২৫ জন।
জেলা সদরে বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৫ জনের মধ্যে সবাই উপস্থিত ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে ৫৮ জনের মধ্যে ৪১ জন ও নবম শ্রেণিতে ৫৫ জনের মধ্যে ৩৭ জন উপস্থিত ছিল।
নবম-দশম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারি শিক্ষক উম্মে হাবিবা টুম্পা খোয়াইকে বলেন, ‘দীর্ঘ বিরতির পর শিশুরা বিদ্যালয়ে ফিরে আনন্দিত।’ শিগগিরই উপস্থিতি শতভাগে পৌঁছাবে বলে এই শিক্ষক আশ্বস্থ্য করেন।
বানিয়াচং উপজেলা সদরের পুরানবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৬৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে গতকাল ৩০০ জনের বেশি উপস্থিত ছিল। সিনিয়র শিক্ষক শাহনাজ ইয়াসমিন খোয়াইকে বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে আসার জন্য উদগ্রীব ছিল। গত ৬ আগস্ট থেকে আমরা কর্মস্থলে ফিরলেও ছাত্রছাত্রী কম ছিল। এখন শঙ্কা কাটিয়ে ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে ফিরবে।
বুরুজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণিতে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত। বাকী শ্রেণিগুলোর ছাত্রছাত্রী আসেনি। সেখানে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২৮ জন।
শিক্ষকরা জানান, এ এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসবাস বেশি। তাদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিধায় অনেকে পড়তে আসেনি। আগামীকাল উপস্থিতির হার স্বাভাবিকে ফিরবে।
জানা গেছে, হবিগঞ্জের ৯ উপজেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯৫ জন শিক্ষার্থী। গতকাল তাদের মধ্যে ৯৫ হাজার ৮০২ জন বিদ্যালয় ও কলেজে উপস্থিত হন। প্রথম দিন উপস্থিতির হার ৪০ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
জেলায় ১ হাজার ৫৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৫৭১ শিক্ষার্থীর মধ্যে গতকাল ৬০ শতাংশ ছেলেমেয়ে বিদ্যালয়ে ফিরেছে বলে সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গকুল চন্দ্র দেবনাথ খোয়াইকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দু’য়েকদিনের মধ্যেই উপস্থিতি শতভাগ হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।’
এদিকে, হবিগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ গতকাল ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ে ফেরায় তাদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। বিরতির ঘাটতি কাটিয়ে ওঠতে শিক্ষকরা অতিরিক্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপক আব্দুল মজিদ ও সরকারি মহিলা কলেজের সহকারি অধ্যাপক শোয়েব আহমেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৬ আগস্ট থেকে তাঁরা কর্মস্থলে ছিলেন। তবে তখন শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম ছিল। তবে গতকাল ছাত্রছাত্রী স্বাভাবিক সময়ের মত উপস্থিত হয়েছে। বৃন্দাবন সরকারি কলেজে একটি পরীক্ষাও নেওয়া হয়।