স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলি ও পিটুনীতে দশজন নিহতের জেরে বন্ধ হয়ে যাওয়া বানিয়াচং থানার কাজ অস্থায়ী স্থানে চলছে; তবে ১২ জন পুলিশ সদস্য চারদিন ধরে কার্যক্রম চালালেও সেখানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং পরিদর্শক (তদন্ত) কেউই যোগ দেননি। আবাসনের অনিশ্চয়তায় নতুন পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আব্দুর রহিম গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত থানায় পৌঁছেননি। আর ওসি হিসেবে তখন পর্যন্ত কোন পরিদর্শককে পদায়নের আদেশ দেয়নি জেলা পুলিশ।
গতকাল রাতে জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা খোয়াইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু দশজনের প্রাণহানী এবং নজিরবিহীনভাবে থানায় আক্রমণ হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হলেও জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেনÑ এমন কোন খবর পাওয়া যায়নি।
পুলিশের গুলিতে আটজনসহ দশজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি উল্লেখ করে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘শিগগিরই ওসি পদায়ন ও পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রহিম কর্মস্থলে ফিরবেন।’
‘ঘটনার দিন এসপি বানিয়াচং গিয়েছিলেন উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আক্রান্ত হওয়ার পর পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসেন। এরপর ঘটনাস্থলে আর গিয়েছেন কি না তা আমার জানা নেই।’
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট সকাল ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাগরদিঘীর পশ্চিমপাড় ঈদগাহ মাঠ থেকে মিছিল বের করে। গ্যানিংগঞ্জ বাজার প্রদক্ষিণ শেষে মিছিলকারী ৪/৫ হাজার লোক বড়বাজার শহীদ মিনারে গিয়ে জড়ো হন। পরে বিক্ষুব্ধ লোকজন মিছিল নিয়ে থানার সামনে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটি হয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।
সেদিনের ঘটনায় নিহতরা হলেন, বানিয়াচং উপজেলায় খন্দকার মহল্লার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে ও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র আনাস (১৪), পাড়াগাঁও গ্রামে শমশের মিয়ার ছেলে শ্রমজীবী মোজাক্কির মিয়া (৪০), কামালখানী গ্রামের রাজমিস্ত্রী নয়ন মিয়া (১৮), কমলারাণীর দিঘীর পূর্বপাড়ে মোশাহিদ আখঞ্জির ছেলে সাংবাদিক সোহেল আখঞ্জি (২৭), জাতুকর্ণপাড়া ডুগিহাটির আব্দুর রউফের ছেলে রঙমিস্ত্রী তোফাজ্জল মিয়া (২২), বটের হাটির আব্দুন নূরের ছেলে কাঠমিস্ত্রী আশরাফুল ইসলাম (১৭), পূবগড় গ্রামে ধলাই মিয়ার ছেলে পেশাজীবী সাদিকুর রহমান (৩০), কামালখানি মহল্লায় তাহির মিয়ার ছেলে পেশাজীবী আকিনুর মিয়া (৩৫), যাত্রাপাশা মহল্লায় সানু মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া (১২) ও বানিয়াচং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সন্তোষ রায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে চারজনসহ সাতজন নিহত হন।
তখন চিত্র ধারণ করতে গেলে বিক্ষুব্ধরা এক সাংবাদিককে পিটিয়ে হত্যা করে। মোট মৃতের সংখ্যা হয় নয়। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা থানার উপপরিদর্শক সন্তোষকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরদিন গুলিবিদ্ধ আরেকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
এরপর স্থানীয় লোকজন থানায় আক্রমণ করে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন এবং পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এরপর গত ১৫ আগস্ট ১২ জন পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে যোগ দেন। পরদিন থানা প্রাঙ্গণ থেকে ৬৬ রাউন্ড বন্দুকের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।