সাইফ আহছান/বদরুল আলম ॥ মাধ্যমিক পর্যায়ে জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। যেখানে ভর্তিযুদ্ধ থেকেই প্রতি বছর ছিটকে পড়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। ফলাফলে পুরো অঞ্চলে অনুকরণীয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কয়েক বছর আগেও এখানকার ছাত্রদের আদব-কায়দা ও নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণ করতো অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সাম্প্রতিককালে বিদ্যালয়টির অরক্ষিত ক্যাম্পাস আর অসঙ্গিতপূর্ণ দেয়াল লিখন ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। অযতœ আর অবহেলায় এক সময়ের পরিচ্ছন্ন আঙিনা হয়ে উঠেছে অপরিচ্ছন্ন। প্রবেশ করলে মনে হয় পরিত্যক্ত কোন স্থাপনা। স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন মহলে এনিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দু’টি ভবনের দেয়ালে বড় আকারের অক্ষরে অসঙ্গতিপূর্ণ লেখা। পিছনের দেয়ালগুলো ভরপুর অশ্লীলতাপূর্ণ বাক্যে। শৌচাগারগুলো অনেকটা নিষিদ্ধ পল্লীর ন্যায়। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা এমন কুরুচিপূর্ণ লেখা ভবিষ্যত প্রজন্মের জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে এবং এনিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয় আঙিনায় অপরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপনের কারণে জঙ্গলের ন্যায় রূপ নিয়েছে। প্রতিটি শ্রেণীকক্ষের সামনেই ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। শত বছরের পুরোনা মজবুত টিনের চালে উঠে গেছে বিভিন্ন জাতের গাছে চারা। এতে দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভবনগুলো। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও গেটে দায়িত্বরত দারোয়ানকে পাওয়া যায়নি। গেট খোলা থাকলেও তালা ঝুলছিল তার কক্ষে। ধূমপানরত অবস্থায় পাওয়া যায় কয়েকজন যুবককে।
সরকারি এক কর্মকর্তা জানান, সন্ধ্যার পর বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে মাদকাসক্ত একদল যুবক। মাঝরাত পর্যন্ত সেখানে চলে আড্ডা এবং মাদক সেবন। বিদ্যালয় আঙিনায় মাদক সেবনের সরঞ্জামাদি পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এলাকার প্রবীন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৮৮৩ সালের ১ জানুয়ারি পূর্ণমাত্রায় উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তর হয় হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। তখনকার সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভাল ফলাফল অর্জন করে এখানকার শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে জেলায় প্রায় প্রতি বছরই অর্জিত হয় সর্বোচ্চ ফলাফল। এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের আদব-কায়দা ছিল অত্র অঞ্চলের যে কোন বিদ্যালয়গুলোতে অনুকরণীয়। কিন্তু গেল কয়েক বছর বিদ্যালয়টি পূর্বের তুলনায় অনেক খারাপ ফলাফল অর্জন করেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে শিষ্টাচার, নৈতিক মূল্যবোধ এবং নিয়মানুবর্তীতার অভাব।
গেল কয়েকদিন পূর্বে বিদ্যালয়টির পুকুরে মাছ শিকার করছিল এক যুবক। তখন বৃন্দাবন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এর প্রতিবাদ করলেও আক্রমণের শিকার হতে হয় তাকে। পূর্বে পাঠদান চলাকালে কোন শিক্ষার্থীকে বাইরে দেখা যেতো না। কিন্তু ইদানিংকালে বিদ্যালয়ের ভেতরেই দলবেঁধে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারীর ঘটনারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ব্যাপারে কর্তব্যরতদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন শহরবাসী।
প্রবীণ এক শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের পদ ৫৬টি। যেখানে রয়েছেন ৩৩ জন। চারজন আয়া-ঝাড়–দার থাকলেও তারা ঠিকমতো কাজ করছেন না। গেটে থাকা পাহাড়াদারও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় বহিরাগত যুবকরা যে কোন সময় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারছে।
জাতীয়ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিদ্যালয়টির কয়েকজন প্রাক্তণ শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের কাছে মনে হয় হবিগঞ্জের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এটি প্রায় জঙ্গলে রূপ নিয়েছে। দেয়ালগুলো দেখলে মনে হয় প্রাক্তন কোন স্থাপনা। এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আলফাজ উদ্দিন এ ব্যাপারে বলেন, জনবল সংকটের কারণে বিদ্যালয় কিছুটা অপরিচ্ছন্ন হয়েছে। শীঘ্রই এগুলো পরিস্কার করা হবে। এছাড়া বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার ও মসজিদের দিকে কিছু বখাটে রাতের বেলা আড্ডা বসায়। তারা অপ্রীতিকর আচরণ করবে বিধায় ভয়ে তাদেরকে কিছু বলেন না দায়িত্বরতরা। তবে মাঝেমধ্যে পুলিশ এসে এদেরকে বিদায় করে দিলেও সম্পূর্ণভাবে প্রবেশ নিষেধ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। দেয়ালে কুরুচিপূর্ণ লেখাগুলো তার নজরে পড়েনি বলেও জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান এ ব্যাপারে বলেন, আমি সরেজমিনে পরিদর্শনের পর এসব ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।