স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আওয়ামী লীগ দম্ভ দেখিয়ে বলতো তাঁরা কখনও পালাবে না। দেশবাসীকে নিয়ে তাঁরা অন্যায়ভাবে খেলা করতো। এবার ছাত্র-জনতা তাঁদের সঙ্গে এমনভাবে খেলেছে যে মাঠ ছেড়ে জঙ্গলে গিয়েও তাঁদের শেষ রক্ষা হয়নি। তৌহিদি জনতা আওয়ামী লীগের লোকদের জঙ্গল থেকে পর্যন্ত ধরে এনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ যতটা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে সবগুলোর বিচার হবে।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাঃ শফিকুর রহমান গতকাল শনিবার হবিগঞ্জ পৌরসভা মাঠে ছাত্রজনতার আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।
নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করত; জনগণকে মনে করতো ভাড়াটিয়া। মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করে জুলুম-অত্যাচার করেছে। বিচার বিভাগ ধ্বংসের মধ্য দিয়ে শতশত জুডিসিয়াল কিলিং চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল করেছে আমাদের বিচারের জন্য এ আদালতে এখন তাঁদেরই উঠতে হবে।’
আওয়ামী লীগের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে উল্লেখ করে ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, ‘শোধ নিতে হলে আমাদেরই নেওয়ার কথা। আমরা কখনও প্রতিশোধ নিইনি; নেবও না। দেশে পট পরিবর্তনের পর জামায়াত মন্দির পাহাড়া দিয়েছে, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।’
‘আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে দেশ শাসন করেছে। ডামি নির্বাচন দিয়ে সরকার গঠন করেছে। এই ডামি সরকারের সকল নির্বাহী আদেশ অবৈধ। এসব আদেশ জনগণ অগ্রাহ্য করে।’
নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতটা সময় পাবে প্রসঙ্গে জামায়াত আমীর বলেন, ‘দেশকে শৃঙ্খলায় ফেরাতে যতটা সময় প্রয়োজন ততটা না দিলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব না। তাঁরা অত্যন্ত স্বচ্ছ। দীর্ঘদিন ক্ষমতা আকড়ে রাখবেন না। যথাসময়েই নির্বাচন দিবেন।’ ‘অন্তর্বর্তী সরকার জোর করে ক্ষমতা নেননি। জাতি তাদের দেশ চালানোর দায়িত্ব দিয়েছে’ কথাটি তিনি যোগ করেন।
ভারতের দিক থেকে বাঁধ খুলে দেওয়া ও সাম্প্রতিক বন্যা সম্পর্কে রাজনৈতিক দলের প্রধান বলেন, ‘আল্লাহর স্বাভাবিক সৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটলে বিপর্যয় অনিবার্য। নদীতে বাঁধ দিতে হবে কেন? আন্তর্জাতিক নদীর কিছু নিয়ম-কানুন আছে। নদীতে বাঁধ দেওয়া তো অন্যায়। ভারত শুষ্ক মৌসুমে বাঁধের সুবিধা নেয়; আর বর্ষায় পানি জমিয়ে হঠাৎ ছেড়ে দেয়। সৎ প্রতিবেশী হিসেবে আমরা এমন আচরণ আশা করি না।’
এ অনুষ্ঠানে ছাত্র আন্দোলনে নিহত হবিগঞ্জের ১৫ জনের পরিবারের প্রতিটিকে ১ লাখ টাকা করে মোট ১৫ লাখ টাকা নগদ অর্থসহায়তা প্রদান করেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর। সহায়তা প্রদানের সময় তিনি ছবি ধারণ না করার অনুরোধ জানানÑ যেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর হাতে পরম মর্যাদায় উপহারটুকু তুলে দেওয়া যায়।
নিহতদের পরিবারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাঁরা জাতীয় সম্পদ; জাতীয় বীর। তাঁদের আত্মত্যাগে জুলুমবাজ সরকারের হাত থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে।’
তাঁর বক্তব্যে উপস্থিত লোকজন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মঞ্চ থেকে নেমে আমীরে জামায়াত নিহতদের পরিবারের সদস্যদের কাছে গিয়ে তাঁদের খোঁজখবর নেন এবং শান্তনা প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে অর্থ সহায়তা গ্রহণ করেছেন নিহত সাদিকুর মিয়ার স্ত্রী জান্নাত বেগম, নয়ন মিয়ার মা ঝর্না বেগম, আকিবুর মিয়ার স্ত্রী রাকিবা আক্তার, আনাস মিয়ার ভাই রাজিব মিয়া, তোফাজ্জুল মিয়ার বাবা আব্দুর রউফ, আশরাফুল মিয়ার বাবা আব্দুন নূর, মুজাক্কির মিয়ার স্ত্রী সুজিনা বেগম, নিহত সাংবাদিক সুহেল আখঞ্জির মেয়ে শিমু আখঞ্জি, হাসাইন মিয়ার বাবা সানু মিয়া, শফিকুল ইসলাম শামীমের স্ত্রী পিয়ারা বেগম, নাহিদুল ইসলামের ভাই নাইমুল ইসলাম, মামুনুল ইসলামের ভাই আমীর হামজা, মোনায়েম আহমদ ইমরানের স্ত্রী ইয়াসমিন বেগম, রিপন শীলের মা রুবি রাণী ও আজমত আলীর স্ত্রী রবিরুন বেগম।
হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের শাখার আমির মাস্টার আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী অধ্যক্ষ কাজী মহসিন আহমেদের পরিচালনায় বৈষম্যে বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে হবিগঞ্জ জেলার শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে স্বাক্ষাৎ, অনুদান প্রদান ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ অতিথি ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারী জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরীর আমীর মোঃ ফখরুল ইসলাম, হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা মুখলিছুর রহমান, সিলেট মহানগরীর সেক্রেটারি মোঃ শাহজাহান আলী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য শাহীন আহমদ খান, জেলা সহকারি সেক্রেটারি ও চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট নজরুল ইসলাম, সহকারি সেক্রেটারি আব্দুর রউফ বাহার, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আশরাফ আলী, কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুস শহীদ, জেলা ছাত্র শিবির সভাপতি রবিউল হাসান, সেক্রেটারি হোসাইন আহমদ প্রমুখ।