ঐতিহ্যের পেশা ত্যাগ করছেন শায়েস্তাগঞ্জের কুমারেরা

প্রথম পাতা

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ এক সময় শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার কুমারপাড়ায় দিনরাত চলতো ব্যস্ততা। কুমাররা প্রতিদিন সূর্য ওঠার সাথে সাথে হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে গ্রামগঞ্জের উদ্দেশ্যে বের হতেন; ফিরতেন রাতে। লোকজন তাঁদের বাড়িতে গিয়েও জিনিসপত্র ক্রয় করতেন।
কুমারদের জীবন-জীবিকার একমাত্র মাধ্যম ছিল মাটির তৈরি হাঁড়িপাতিল, সরা, থালা, দোনা, ঝাঁজর, মটকি, গরুর খাবার দেওয়ার চাড়ি, কোলকি, কড়াই, কুয়ার পাট, মাটির ব্যাংক, শিশুদের জন্য রকমারি নকশার পুতুল, খেলনা ও মাটির তৈরি পশুপাখি বিক্রি করা।
কিন্তু এখন বাজারে কাঁচ, অ্যালুমিনিয়াম, মেলামাইন ও প্লাস্টিকের তৈরি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এই মৃৎশিল্প কদর হারিয়েছে।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার মৃৎশিল্পীরা খোয়াইকে জানান, হাতের তৈরী জিনিসপত্র গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে তাঁরা বেশ লাভবান হতেন। এখন সেসব জিনিসের কদর নেই। শুধু পূজাপার্বণে প্রতিমা তৈরির মাধ্যমে যে অর্থ পাওয়া যায় তা দিয়ে কোনরকম সংসার চলে।
উপজেলার নূরপুর ইউনিয়নে পালপাড়ার রমেশ পাল জানান, মৃৎশিল্পের জিনিসপত্র আগের মতো বিক্রি হয় না। তারপরও অনেক অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে পূর্ব পুরুষের এই পেশা আঁকড়ে ধরে রেখেছি।
৩৫ বছর বয়সী জল্পনা রাণী পাল (৩৫) জানান, এক সময় এলাকার অনেক লোক মৃৎশিল্পে জড়িত ছিল। জীবন-জীবিকার অন্যতম মাধ্যম ছিল এ পেশা। কিন্তু বর্তমানে তাঁর এলাকায় ২৫-৩০টি পরিবার বসবাস করলেও দশ থেকে পনের জন এ পেশায় জড়িত।
শিল্পীরা আগ্রহ হারানোর কারণ হিসেবে তিনি জানান, যে মাটি দিয়ে জিনিসপত্র তৈরি হয় সেগুলোর দাম বেশি, গাড়িভাড়াও লাগে। আয় ও ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় লোকসান গুণতে হচ্ছে।
রবীন্দ্র চন্দ্র পাল জানান, তিনি তাঁর পিতামাতার কাছ থেকে এ কাজ শিখেছিলেন। তখন মাটির তৈরি জিনিসপত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল। এখানে ভাত, তরকারির পাতিল, বড় কলস, মটকিসহ প্রায় পঞ্চাশ প্রকারের জিনিসপত্র তৈরি হত। কিন্তু চাহিদা কমে যাওয়ায় কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া বাজারে কাঁচ, অ্যালুমিনিয়াম, মেলামাইন ও প্লাস্টিকের তৈরি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এই মৃৎশিল্প কদর হারিয়েছে।
তিনি আরো জানান, আগে প্রতি গাড়ি মাটির দাম পাঁচশ’ থেকে সাতশ’ টাকা ছিল। সেই মাটি এখন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারে ক্রয় করতে হচ্ছে। আগে প্রতিমণ লাকড়ি কেনা যেতো ৮০ থেকে একশ’ টাকা মণ। এখন সেই লাকড়ির দাম প্রায় তিনশ’ টাকা।
স্থানীয়রা জানান, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা করা প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *