স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে সরকারি ওষুধ রোগীদের হাতে বাঁধাহীনভাবে পৌঁছে দেওয়া ও প্রেসক্রিপশন লেখার সময় ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধির উপস্থিতি দূর করাসহ আট দফা দাবি প্রণয়ন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
ছাত্রআন্দোলনের সমন্বয়করা গতকাল বুধবার হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকারের কাছে লিখিত আকারে দাবিগুলো হস্তান্তর করেন।
আন্দোলনকারীরা আট দফা দাবি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি মডেল প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তাঁরা প্রয়োজনে হাসপাতালে স্বেচ্ছাশ্রম দিবেন বলেও জানান।
আট দফা দাবির প্রথমটি হলÑ হাসপাতালকে পরিস্কার ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখাঃ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানায়, হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রতিটি জায়গা পরিস্কার এবং দুর্গন্ধমুক্ত থাকতে হবে। প্রয়োজনে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে প্রস্তুত।
চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করাঃ
২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে রোগী অনুপাতে চিকিৎসক সংখ্যা কম। দুপুর ২টার আগেই চিকিৎসকরা সরকারি বাসভবনে চলে যান। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়াসহ সমন্বিতভাবে শিগগিরই এ সমস্যা সমাধান করা জরুরী।
বহির্বিভাগ ও প্যাথোলজি বিভাগে পরীক্ষার সময়সূচি বাড়ানো ও যন্ত্রপাতি ত্রুটিমুক্তকরণঃ
বহির্বিভাগ ও প্যাথোলজি বিভাগ দুপুর ১টায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রোগীরা পরীক্ষা করাতে এসেও ফিরে যান। সেজন্য বহির্বিভাগ বিকাল ৪টা পর্যন্ত ও প্যাথোলজি বিভাগ রাত ১২টা পর্যন্ত চালু রাখা চাই।
হাসপাতালে রোগীদের পরীক্ষার প্রতিবছরই সরঞ্জাম আসে। কর্মচারীদের অবহেলায় সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। পরে তদারকির অভাবে আর সেগুলো ঠিক হয় না। ছাত্র-জনতা এসবের পূর্ণ ব্যবহার চায়।
ব্লাডব্যাংক গঠন করে ব্লাড সংরক্ষণের ব্যবস্থাকরণ ঃ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে একটি কার্যকর ব্লাডব্যাংক গঠন করার; যেখানে পর্যাপ্ত রক্ত সংরক্ষণ হবে। রক্তদাতাদের প্রত্যেকের পরিচয় সংরক্ষণ করাও জরুরী। এ কাজে ছাত্র-জনতা পূর্ণ সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।
রোগীদের হাতে সরকারি ওষুধ বাঁধাহীনভাবে পৌঁছে দেওয়া ও হয়রাণী বন্ধ করা ঃ আন্দোলনকারীরা দেখেছেনÑ চিকিৎসকেরা প্রেসক্রিপশন লেখার সময় ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা দাঁড়িয়ে থাকেন এবং বেশিরভাগ চিকিৎসক সরকারি ওষুধের সংকট রয়েছে জানিয়ে বাইরে থেকে বিভিন্ন ওষুধ ক্রয়ে রোগীদের বাধ্য করেন। এ সমস্ত হয়রানি বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুরাতন হস্তক্ষেপকারীদের তালিকা তৈরী করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় হাসপাতালকে দালাল মুক্ত করা চাই।
রোগীর খাবারের মানোন্নয়ন ও শিশুওয়ার্ডে শিশুখাদ্য নিশ্চিতকরণঃ
শিক্ষার্থীরা জানান, সদর হাসপাতালে রোগীদের নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়। পরিবেশন অপরিস্কার, শিশু ওয়ার্ডে শিশুখাদ্যের যোগান নেই দেখে তাঁরা বিস্মিত। অবিলম্বে খাবারের গুণগত মানোন্নয়ন ও নিরাপদ শিশুখাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তদারকির জন্য দল গঠন ঃ
হাসপাতালের সমস্ত বিষয় তদারকি করার জন্য একটি পর্যবেক্ষক দল গঠন করতে হবে। যার কাছে হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগ প্রত্যেকদিন কাজের জবাবদিহিতা করবেন।
এদিকে, হাসপাতালের ২৫০ শয্যা ভবনের দুটি তলা শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার করায় রোগীদের পর্যাপ্ত জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না বলে তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকার জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, সদর হাসপাতালে চিকিৎসক স্বল্পতা রয়েছে। ফলে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। তারপরও সমন্বিতভাবে কাজ করে দাবিগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।