অন লাইন পাঠদানে দেশ সেরা হবিগঞ্জ জেলা

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা পরিস্থিতিতে দেশে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অন লাইন পাঠদান। আর এই অন লাইন পাঠদানে দেশের অন্যতম শীর্ষ জেলা হিসাবে অবস্থান অর্জন করেছে হবিগঞ্জ জেলা। এর মাঝে সরকারী বৃন্দাবন কলেজ ও বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুল পাঠদানে সৃষ্টি করেছে উদাহরণ। জেলা প্রশাসনের বেশ কিছু সৃজনশীল উদ্যোগে সুফল পেতে শুরু করেছে জেলার প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরাও।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শিক্ষা শাখা ও জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, অন লাইন শিক্ষা কার্যক্রমে সিলেট বিভাগে ইতোমধ্যে সেরা জেলা হিসাবে অবস্থান নিশ্চিত করেছে হবিগঞ্জ জেলা। সারা দেশের প্রথম কয়েকটি জেলার মাঝে নাম রয়েছে হবিগঞ্জের। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি উম্মে ইসরাত জানান, জেলা প্রশাসকে নির্দেশে ২৫ এপ্রিল থেকে হবিগঞ্জ জেলায় অন লাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। সারাদেশে অনলাইন স্কুলের সংসদ টিভির কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের দেখা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে হবিগঞ্জ জেলা প্রথম স্থানে রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়েও এগিয়ে আছে এই জেলা। অন লাইন ক্লাস বাতায়নে আপলোডের ক্ষেত্রেও সারাদেশে এগিয়ে হবিগঞ্জ জেলা। জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ইসলামিয়া একাডেমীর ৯৮ ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাশে উপস্থিতি নিশ্চিত করে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। তারা পরীক্ষা গ্রহণ করতেও প্রস্তুত রয়েছে। জেলা শহরের বিকেজিসি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভাল ক্লাস হচ্ছে। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলোতেও অন লাইন ক্লাস হচ্ছে নিয়মিত।
তিনি আরও জানান, হবিগঞ্জের ৪টি সংসদীয় আসন অনুযায়ী এলাকা বিভক্ত করে উদ্বুদ্ধকরণ সভা হয়েছে। শিক্ষকদেরকে অন লাইন ক্লাশের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। শিক্ষকদেরকে ৪টি পর্যায়ে অন লাইন পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে গুগল ফর্ম এর মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদেরকে আগ্রহী করতে ৪টি পর্যায়ে অন লাইন কুইজ ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড ফোন বা সাউন্ড সিস্টেম না থাকায় অনেক শিক্ষক অন লাইন ক্লাস তৈরি ও আপলোড করতে পারছেন না বলে জেলায় ৩টি অন লাইন ক্লাস স্টুডিও তৈরি করা হয়েছে। আরও ৩টি তৈরি হচ্ছে। মোট স্টুডিও হবে ১০টি। এই স্টুৃডিওতে যে কোন শিক্ষক ক্লাস রেকর্ড ও আপলোড দিতে পারছেন।
উম্মে ইসরাত জানান, সংসদ টিভির ক্লাসগুলো কেউ মিস করলে যাতে পুনরায় দেখতে পারে তার জন্য স্থানীয় ক্যাবল অপারেটর এয়ারলিংক এর নিজস্ব চ্যানেলে পূর্বে নোটিশ দিয়ে ক্লাস প্রচার হচ্ছে। জেলার সকল কেবল অপারেটরেই এই ব্যবস্থা চালু হবে। প্রশাসন ও শিক্ষা কর্মকর্তারা এই কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি করছেন।
হবিগঞ্জের শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্ল্া জানান, অন লাইন ক্লাশে আমরা সারা দেশে এগিয়ে রয়েছি। হবিগঞ্জে অনলাইন ক্লাশের জন্য ১৪৫টি পেইজ রয়েছে। এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৯৩৮টি মানসম্মত কনটেন্ট আপলোড করা হয়েছে। শুধু জুলাই মাসেই আপলোড হয়েছে ২ হাজার ৩১৬টি কনটেন্ট। জেলার দুইশতাধিক শিক্ষক অন লাইনে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। কোন কোন স্কুলে ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অন লাইন ক্লাশে হাজির থাকছেন।
হবিগঞ্জ জেলার একমাত্র ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুল অন লাইন ক্লাস কার্যক্রমে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। ওই স্কুলে এখন পর্যন্ত অন লাইন ক্লাস হয়েছে ৩ হাজার ৮৭৫টি। নিয়মিত ক্লাসের মতই হচ্ছে অন লাইন ক্লাস। প্রতিদিন গড়ে ৬০টি ক্লাস হয় ওই স্কুলে। ক্লাশের পূর্বেই নোটিশ জানানো হয় সকল শিক্ষার্থীকে। এখানে শতভাগ শিক্ষার্থী ক্লাশে উপস্থিত থাকে। সাধারনত শুক্র ও শনিবার স্কুল বন্ধ থাকলেও অনলাইন ক্লাস শনিবারেও নেয়া হয়েছে।
বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের অধ্যক্ষ সৈয়দ রওশন সুলতানা জানান, তার প্রতিষ্ঠানে শুধু অন লাইনে ক্লাসই অনুষ্ঠিত হয় না। অন লাইনে ক্লাস টেস্টও অনুষ্ঠিত হয়। অন লাইনে পাঠদান সফল হওয়ায় এবং সকল শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত হওয়া আমরা ৩১ আগস্ট থেকে স্কুলের পরীক্ষা গ্রহণ করব। পরীক্ষা হবে অন লাইনে। এর মাঝে প্রত্যেক বিষয়ের ১০০ নম্বরের মাঝে অনলাইনে পরীক্ষা হবে ৫০ নম্বরের, অন লাইনে ক্লাশের হাজিরার জন্য থাকবে ২০ নম্বর। হোম ওয়ার্কও অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য থাকে ৩০ নম্বর।
জেলার সবচেয়ে বড় কলেজ বৃন্দাবন সরকারী কলেজ সারা দেশের কলেজের মাঝে অন লাইন ক্লাস ও পরীক্ষায় এগিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কলেছের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ দেব। তিনি জানান, যখন হবিগঞ্জের সকল কলেজের পাঠদান বন্ধ ছিল তখন এপ্রিলের ১ম সপ্তাহ থেকে পুরোদমে বিভিন্ন উপায়ে আমাদের কলেজে অন লাইন ক্লাস নেয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে জুলাইয়ে মাউশি অধিদপ্তরের নির্দেশনা আসার পর সমন্বিত রটিনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক ক্লাস নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার সময় চলে যাচ্ছিল, অনলাইনে এই পরীক্ষাটিও সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। অনলাইন পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এবং উপস্থিতি ছিলো উৎসাহব্যঞ্জক। এধরণের অনলাইন পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রথম দু’ একটি কলেজের মধ্যেই বৃন্দাবন সরকারি কলেজের অবস্থান। আমাদের অভিজ্ঞতা আমলে নিয়ে অন্যান্য কলেজও এখন অনলাইন পরীক্ষায় এগিয়ে আসছে।
তিনি আরও জানান, মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে করোনা বাংলাদেশে আক্রমন করলে এ কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে বিলি করি আমরা। এই সময়ে মহামারী মোকাবেলায় কলেজের বিভিন্ন বিভাগ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাস্ক এবং সুরক্ষা সামগ্রীও বিতরণ করেছে। কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর দেওয়ান জামাল উদ্দিন চৌধুরী’র উদ্যোগে একাধিকবার করোনায় কর্মহীন এবং দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, আমি এখানে দায়িত্ব নিয়েই শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। সকলের সহযোগিতায় আমরা অন লাইন ক্লাস কার্যক্রমে সারাদেশে সেরা অবস্থায় রয়েছি। এর বাহিরেও এবছর এসএসসি ও জেএসসিতে ভাল ফলাফল অর্জন করার জন্য কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিকল্পনার মাঝে রয়েছে প্রতি শিক্ষককে ১০জন শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিয়ে বিশেষভাবে যতœ নিবেন। শিক্ষকরা প্রতিদিন ওই সকল শিক্ষার্থীর অন লাইন ক্লাশে উপস্থিতি নিশ্চিত করবেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বাসায় পড়ালেখা করছে কিনা তাও তদারকি করবেন। এবার কেউ নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করলে তাকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *