ছোট রাকিবের আমড়া বিক্রিতেই চলে সংসার, মায়ের চিকিৎসা

শেষ পাতা

মোঃ মামুন চৌধুরী ॥ শিশু রাকিব মিয়া (১২) বই-খাতা-কলমের বদলে ঘুরে ঘুরে আমড়া বিক্রি করে মায়ের চিকিৎসা ও পরিবার চালাচ্ছে। প্রতিদিন ভোরে বের হয়ে বিকেলে সদাইপাতি নিয়ে ঘরে ফেরা হয় তার। শায়েস্তাগঞ্জ নিজগাঁও এলাকার ভাড়া বাসায় মাকে নিয়ে থাকে রাকিব। সে এলাকাতেই পথে আমড়া বিক্রির সময় রাকিব কথা বলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।
সে জানায়, তার পিতা আব্দুল আহাদ আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করছেন। তাদের খোঁজ-খবর তিনি নেন না। তার বড়ভাইও বিয়ে করে সংসার নিয়ে অন্যত্র থাকে। বোনের বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে অসুস্থ মাকে তাকেই দেখাশুনা করতে হচ্ছে।
জীবিকা নির্বাহে মহাজনের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫০টি আমড়া একটি পাত্রে পদ্মফুলের পাপড়ির মতো সুন্দর করে কেটে বিক্রি করছে। এতে তার তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকা লাভ হয়। এ টাকায় তার মায়ের ওষুধ ও তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা হচ্ছে কোনভাবে। লেখাপড়া করতে না পারায় তার মনে বিরাট আক্ষেপ।
রাকিব জানায়, লেখাপড়া করতে পারলে সে চাকরি নিয়ে মায়ের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারতো। কিন্তু তার এ পথ বন্ধ। কারণ ভোরেই তাকে ঘর থেকে বের হয়ে ঘুরে ঘুরে আমড়া বিক্রি করতে হচ্ছে।
সমাজসেবক রনি সরদার বলেন, অভাবের সংসারে শিশু বয়সেই স্কুলে যাবার বদলে পথে পথে আমড়া বিক্রি করতে হচ্ছে রাকিবকে। তার কাছ থেকে প্রায়ই আমড়া কিনে খাই। শিশুটির মনের ইচ্ছা নিজের পুঁজিতে আমড়ার দোকান দেওয়া। তার মনের ইচ্ছা পূরণে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা উচিত।
রাকিব জানায়, আষাঢ়ের শেষ থেকে আশ্বিন মাসের শেষ পর্যন্ত আমড়ার ভরা মৌসুম। কখনো কার্তিকেও পাওয়া যায়। তাই এই সময় পর্যন্ত সে আমড়া বিক্রি করে। পরে অন্য ফল বিক্রি করছে কয়েক বছর ধরে।
এর আগে তার মা বিভিন্ন স্থানে কাজ করে পরিবার চালাতেন। অসুস্থ হওয়ায় তিনি আর কাজে যেতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে তাকে এ পেশায় নামতে হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *