মোঃ মামুন চৌধুরী ॥ শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার দক্ষিণ বড়চরে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় দুটি পা হারানো শিশু নদী আক্তারের পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ফজল উদ্দিন তালুকদার। নদীর সুচিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকা দান করেছেন তিনি। গতকাল শনিবার রাতে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নিজ নিজ অবস্থা থেকে স্কুল ছাত্রী শিশু নদী আক্তারের পাশে সবাইকে দাঁড়াতে হবে। তাতে দ্রুত তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা হবে। কারণ ইতোমধ্যে অর্থাভাবে তাঁর চিকিৎসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
নদীর বাবা রফিক মিয়া জানান, গ্রামের জমি-জমা ও প্রাইভেটকার বিক্রি করেও চিকিৎসার খরচ কুলানো যায়নি নদীর। পরে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকেও টাকা ধার করতে হয়েছে। এ পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ ১৯ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমার পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হলে দুটি কৃত্রিম পা লাগানো প্রয়োজন নদীর। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। কোথায় পাব এতো টাকা।
জানা গেছে, নদীর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুরে। ১২ বছর যাবৎ সে বাবা-মায়ের সাথে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার দক্ষিণ বড়চরে ভাড়া বাসায় বসবাস করছে। শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমি এন্ড হাইস্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে নদী। পড়ালেখায়ও বেশ আগ্রহ তার। কারও অসুস্থতা ও সমস্যায় সাধ্যমতো পাশে দাঁড়াতো সে। মেয়ের এসব গুণ দেখে বাবা রফিক মিয়া স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন নদীকে ডাক্তার বানানোর। কিন্তু হঠাৎ এক দুর্ঘটনা সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। যে মেয়েকে ডাক্তার বানিয়ে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে চেয়েছিলেন, সেই মেয়েকে বাঁচাতে এখন তিনি ছুটছেন এদিক সেদিক।
ঘটনাটি চলতি বছরের ১৫ মে’র। এদিন নদীর জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা। বিকেলে বাসার পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলছিল নদী। বাসার ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুৎ লাইনের তারটি খুলে রাখা হয়েছিল ছাদে। পাশেই জমানো পানিতে পড়েছিল আরও একটি তার। খেলতে খেলতে ওই পানিতে পা পড়ে যায় নদীর। এতে গুরুতর আহত হয় সে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে নদীকে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। সেখানে গত ৪ জুন নদীর দুটি পায়েরই হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন পুড়ে যাওয়া অংশ সার্জারি করা হয়। প্রায় তিন মাস চিকিৎসা শেষে টাকার অভাবে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন বাবা রফিক মিয়া। এখনও তার অনেক চিকিৎসা বাকি। রফিক মিয়া বলেন, বাড়ির যেকোনো কাজে সবার আগে ছুটে যাওয়া মেয়েটির নাম নদী। যেমনই দুরন্ত, তেমনই শীতল। কারও কষ্ট দেখলেই চোখ ছলছল করে তার। অথচ এখন তার জীবন থমকে গেছে। মেয়ের চিকিৎসার অর্থ জোগাতে ঘুরছেন আত্মীয়-স্বজনের কাছে। অনেকের কাছে গেলেও নিরাশ হয়ে ফিরছেন। রফিক মিয়ার দিনরাত কাটছে হতাশায়।