স্টাফ রিপোর্টার ॥ লেখাপড়া শেষে চাকরী করতে হবে; এজন্যই ছাত্রজনতার আন্দোলনে যোগ দেয় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মোঃ হাসাইন মিয়া। মিছিলে পুলিশ গুলি করলে ছেলেটি একটি ঢালের পিছনে আশ্রয় নেয়; ছোট্ট একই ঢালের পিছনে আরও একজন ছাত্র।
হঠাৎ একটি বুলেট হাসাইনের মাথার পিছন দিকে বিধে মাথা ভেদ করে কপাল ফুটো করে বের হয়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হাসাইন, নিথর দেহ নেওয়া হয় হাসপাতালে; সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
ছেলেটির বাবা তখন হাওরে মাছ শিকার করছিলেন; গুলিতে সন্তান মারা যাওয়ার খবর পেয়ে দুই মাইল দৌড়ে হাসপাতালে এসে নিথর দেহ দেখতে পান।
নিহত হাসাইনের বাবা, বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ যাত্রাপাশা ঠাকুরবাড়ির বাসিন্দা ও ভ্যানগাড়িতে করে সব্জি বিক্রেতা মোঃ সানু মিয়া গতকাল বুধবার দুপুরে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে খোয়াইকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক খোয়াইকে বলেন, ‘হাসাইনের মাথায় গুলি লাগলে তার মগজ ছিটকে আমিসহ আশপাশের লোকদের উপরে পড়ে। মনে হচ্ছেÑ এই মর্মান্তিক মৃত্যুর স্মৃতি কখনও ভুলতে পারব না।’
ছয় ভাই-বোনের মধ্যে নিহত হাসাইন দ্বিতীয়; লোকনাথ রমনবিহারী (এলআর) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো। মেধাবী ছাত্র ছিল; কখনও প্রাইভেট পড়তে হতো না জানিয়ে কান্নায় গতকালও ভেঙ্গে পড়েছেন বাবা সানু মিয়া।
হাসাইনের বড় ভাই জাহেদ মিয়া কূয়ারপাড় মাদরাসায় হিফজ বিভাগের ছাত্র, ছোটদের মধ্যে হোসাইন মিয়া, তামীম মিয়া ও হামিম মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়ে। একমাত্র বোন ফারিয়া আক্তার জান্নাত এখনও দুধের শিশু।
সানু মিয়া আরও জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আবু সাইদ নিহত হওয়ার খবর পায় হাসাইন। মা-বাবাকে বলে, “লেখাপড়া শেষে চাকুরী নিতে হবে, দরকার হলে আবু সাইদের মতো মরবো। তাও আন্দোলনে যাবো।”
তিনি জানান, ছেলের এই কথাগুলো সেভাবে আমলে নেননি। মিছিলে গিয়ে গুলিতে মরতে হয় এটা কল্পনাও করতে পারেননি। এখনও ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন হাসাইনের মা সাজিদা আক্তার। পুরো পরিবার শোকে স্তব্দ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাথায় লাল কাপড় ও ছোট্ট একটি লাঠি হাতে হাসাইন মিছিলে যোগ দেয়। সর্বশেষ তার হাতে একটি ছোট্ট ঢাল ছিল। একই ঢালের পিছনে হাসাইনসহ দুজন ছাত্রকে দেখা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট সকাল ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাগরদিঘীর পশ্চিমপাড় ঈদগাহ মাঠ থেকে মিছিল বের করে। গ্যানিংগঞ্জ বাজার প্রদক্ষিণ শেষে মিছিলকারী ৪/৫ হাজার লোক বড়বাজার শহীদ মিনারে গিয়ে জড়ো হন। পরে বিক্ষুব্ধ লোকজন মিছিল নিয়ে থানার সামনে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটি হয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে চারজনসহ সাতজন নিহত হন।
তখন চিত্র ধারণ করতে গেলে বিক্ষুব্ধরা এক সাংবাদিককে পিটিয়ে হত্যা করে। মোট মৃতের সংখ্যা হয় নয়। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা থানার উপপরিদর্শক সন্তোষকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরদিন গুলিবিদ্ধ আরেকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।