হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার সিআর দত্ত লাইফ সাপের্টে

শেষ পাতা

বদরুল আলম ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধের চার নম্বর সেক্টর কমান্ডার ও হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান চিত্ত রঞ্জন দত্ত (সিআর দত্ত) গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় একটি হাসপাতালে তাকে লাইফ সাপের্টে রাখা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে বারোটায় সিআর দত্তের মেয়ে কবিতা দাশগুপ্তের বরাত দিয়ে বিষয়টি দৈনিক খোয়াইকে নিশ্চিত করেন তার ভ্রাতষ্পুত্র শঙ্খ শুভ্র রায়। এর আগে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাতটায় তাঁকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
শঙ্খ শুভ্র রায় জানান, এক ছেলে ও তিন মেয়ের সাথে আমেরিকায় বসবাস করছিলেন সিআর দত্ত। সোমবার বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাতটায় ফ্লোরিডার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপের্টে রেখেছেন। সুস্থতা কামনায় পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর নিকট দোয়া ও আশির্বাদ কামনা করেছেন তিনি। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত জানান, অসুস্থ হয়ে বাথরুমে হোচট খেয়ে তাঁর হাত ও পা ভেঙ্গে গেছে।
সিআর দত্ত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চার নম্বর সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন। তার পৈত্রিক বাড়ি চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী গ্রামে। বাবার নাম উপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত এবং মায়ের নাম লাবণ্য প্রভা দত্ত।
তিনি শিলংয়ের লাবান গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। পরবর্তীতে বাবা চাকুরী থেকে অবসর নিলে তারা হবিগঞ্জে বসবাস শুরু করেন। সিআর দত্ত ১৯৪৪ সালে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে কলকাতার আশুতোষ কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন। এরপর খুলনার দৌলতপুর কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই শায়েস্তাগঞ্জ রেল লাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট ডাউকি সড়ক পর্যন্ত এলাকা নিয়ে ৪নং সেক্টর গঠন করা হয়। এই সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন সিআর দত্ত। সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সিলেটের রশিদপুরে প্রথম ক্যাম্প বানান তিনি।
চিত্ত রঞ্জন দত্ত ১৯৭২ সালে রংপুরে ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সীমান্ত রক্ষা প্রহরী গঠন করে নাম দেন বাংলাদেশ রাইফেলস। তিনি বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম ডাইরেক্টর জেনারেল।
এছাড়া ১৯৭১ এর পর থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তাকে নানা ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হয়। ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি হেড কোয়ার্টার চিফ অব লজিস্টিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৯ সালে বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালনের পর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *