‘আর আধামিটার পানি হলেই তলিয়ে যেত হবিগঞ্জ শহর’

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উজানের ঢলে গত বুধবার খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ২৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে স্মরণকালের সর্বোচ্চ আগ্রাসী রূপ ধারণ করে। নদীর বাঁধ উঁপচে হবিগঞ্জ শহর ও হাওরে পানি প্রবেশ করতে থাকে। শঙ্কা দেখা দেয় শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ারও।
শহরবাসী তিনদিন আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায় কাটানোর পর অবশেষে গতকাল শনিবার পানি বিপদসীমা থেকে নিচে নামার খবর দিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে জেলাজুড়ে স্বস্তি ফিরেছে।
সম্প্রতি প্রায় এক সপ্তাহ ধরে হবিগঞ্জে বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। গত বুধবার জেলায় ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঢলও অব্যাহত থাকে। ফলে বাড়তে থাকে খোয়াই নদীর পানি।
বুধবার চুনারুঘাটের বাল্লা পয়েন্টে নদীতে পানির উচ্চতা মাপা হয়েছিল ২৩ দশমিক ৭৪ মিটার। যা বিপদসীমা থেকে ২৭৭ সেন্টিমিটার উপরে এবং গত তিন যুগ অর্থাৎ ৩৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। জেলা শহরের আরও দুটি পয়েন্টে ও শায়েস্তাগঞ্জ পয়েন্টেও একইভাবে পানি বিপদসীমার উপরে ছিল। আর কিছু পানি বাড়লে হবিগঞ্জ শহরে বড়রকম বন্যা দেখা দিতো।
এদিকে, পানি বাড়তে থাকায় হবিগঞ্জ শহরের আশপাশে অন্তত ১৩টি স্থান দিয়ে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকে। শহরবাসীর মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। লোকজন রাত জেগে পাহাড়া ও স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত কাজ চালান।
এ অবস্থায় তিনদিন পার হওয়ার পর গতকাল নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমেছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। গতকাল হবিগঞ্জ শহরের মাছুলিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে ১১ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমা থেকে ১৭০ সেন্টিমিটার নিচে।
এ খবরে হবিগঞ্জবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। গতকাল খোয়াই ঘাটলা থেকে স্বাভাবিকভাবে নৌকা ছেড়ে যেতে ও আসতে দেখা যায়। নদীকেন্দ্রিক সকল কর্মকান্ডই লোকজনকে স্বাভাবিকভাবে করতে দেখা গেছে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী হাবিবুর রেজা খোয়াইকে বলেন, ‘১৯৮৮ সালে খোয়াই নদীতে পানির উচ্চতা ২৫.৭৪ মিটার হয়েছিল। এরপর অনেকবার পানি বাড়লেও এতটা বাড়েনি। তিন যুগ পর এবার নদীর পানি এতটা বিপদসীমার উপরে উঠেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর হাফ মিটার (অর্ধমিটার) পানি বাড়লে বাঁধ উপচে শহরে পানি প্রবেশ করতো। এ পরিস্থিতিতে হবিগঞ্জ শহর তলিয়ে যাওয়াটা অসম্ভব ব্যাপার ছিল না।’
প্রতিবারই খোয়াই নদীতে পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, এর সমাধানে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার খোয়াই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
সূত্র জানিয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড খোয়াই নদীর বাঁধ বর্তমান অবস্থার থেকে আরও ১ মিটার উঁচু করতে চায়। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর অপরিকল্পিতভাবে সড়ক নির্মাণের ফলে সেটি সম্ভব হচ্ছে না।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *