বদরুল আলম ॥ হবিগঞ্জ জেলায় ৮টি ছোটবড় নদী ও অর্ধশতাধিক সরকারি জলাশয় দখল করে রেখেছে ৬শ’ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনে এসব দখলদারের তালিকা থাকলেও তাঁদের উচ্ছেদ না করায় সরকারের সম্পদ দখলের পরিধি দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে।
তালিকাভুক্ত ৬শ’ জনের মধ্যে ৮টি নদীর দখলে ২৩৮ জন এবং অর্ধশতাধিক খাল-বিল, জলাশয় দখল করে রেখেছেন আরও ৩৬২ জন। নদীরক্ষা কমিশনের সূত্র বলছে, নদী দখলদারদের মধ্যে হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন খোয়াই নদীতে ১০১ জন, খোয়াইয়ে ১১, নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারায় ৯, ডেবনায় ১৯, বিবিয়ানায় ৫৪, শাখা বরাকে ১১, মাধবপুর উপজেলার কাস্টি নদীতে ৬ ও চুনারুঘাটের খোয়াই নদীতে স্থাপনা নির্মাণ করে রেখেছে ২৩ জন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান।
এসব নদীতে টিনের ঘর, আধাপকা ঘর, মুদি দোকান, টিনের ছাপ্টাসহ নানা ধরণের স্থাপনা রয়েছে। নদীরক্ষা কমিশনের প্রণিত তালিকায় এসব স্থাপনার কথা উল্লেখ আছে বলে সূত্রটি জানায়।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, দখলদারদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, আইনজীবী এবং শিক্ষা, ধর্মীয় ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে অর্ধশত খাল-বিল জলাশয় দখলে রেখে মাছচাষসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন ৩৬২ জন ব্যক্তি। অবৈধ দখলে থাকায় এগুলো থেকে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে না।
হবিগঞ্জ শহরে পুরাতন খোয়াই নদীর ৫ কিলোমিটারজুড়ে রয়েছে কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা। ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন এ সকল স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করলেও বহুতল ভবনসহ প্রায় দেড়শ’ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ার পর সেই অভিযান অজ্ঞাত কারণে থেমে যায়। এরপর প্রায় চার বছর ধরে ফের উচ্ছেদ অভিযান চালানোর জন্য শহরবাসী দাবি জানালেও সেই উদ্যোগ নিচ্ছে না জেলা প্রশাসন। উপরন্তু পুনরায় দখল হয়ে গেছে স্থাপনা উচ্ছেদ করা সেই জায়গাটুকুও।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “পুরাতন খোয়াই নদী উদ্ধার না হওয়ার ব্যর্থতা জেলা প্রশাসনের। নদীটি দখলদারদের কবল থেকে দ্রুত উদ্ধার করাসহ বর্জ্য ও দূষণ বন্ধে কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হবিগঞ্জ শহরের বাসিন্দা ও সরকারের উর্ধ্বতন দপ্তরে কর্মরত এক ব্যক্তি বলেন, “এতগুলো নদ-নদী জলাশয় বেদখলে থাকলেও কোন ধরণের ব্যবস্থা না নেওয়া দুঃখজনক। ফলে প্রতিনিয়ত দখলদারদের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে।”
যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইশরাত জাহান এ বিষয়ে বলেন, “অবৈধভাবে দখলে থাকা নদ-নদী ও জলাশয় চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এরপরই উচ্ছেদের কাজ শুরু হবে।”