‘প্রতিদিন চালের হাড়িই বসে না চুলায়’

প্রথম পাতা

বদরুল আলম : সাপের খেলা প্রদর্শন, সিংগা লাগানো আর তাবিজ-কবজ বিক্রয় করে সংসারগুলো চলছিল অভাব-অনটনে। এরই মাঝে শুরু হল অদৃশ্য শক্তির আক্রমন। স্ত্রী-সন্তানসহ কর্মহীন হয়ে পড়লেন হবিগঞ্জ বেদে পল্লীর বাসিন্দারা। করোনা সংক্রমন শুরুর দিকে দু’দফায় সহায়তা পেলেও এখন আর কেউ থাকায় না তাদের দিকে।
পঞ্চাশোর্ধ্ব ছামিনা বেগম। পেশা খেলা দেখানো ও সিংগা লাগানো। শনিবার সন্ধ্যায় ঝিমুচ্ছিলেন পল্লীতে নিজের অস্থায়ী কুড়ে ঘরটির সামনে বসে। অভাব-অনটন থাকলেও ভালই চলত সংসার। কিন্তু করোনা সংক্রমন শুরুর পর জীবনে চেঁপে বসে অমানিসা। সংসারে এক সন্তান রয়েছে, সেও কর্মহীন।
ছামিনা বলেন, দু’জনের সংসারে প্রতিদিন আয় হতো এক থেকে দুইশো’ টাকা। যা ছিল তাদের প্রতিদিনের খাবার আর ওষুধপত্রের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু করোনা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত কোন আয় নেই। কয়েকদিন এলাকায় বের হলেও তেমন একটা উপার্জন হয়নি। গেল চার মাস ধরে তারা খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছেন।
ছামিনার ঘরের পাশেই আটার রুটি তৈরী করছিলেন সেলিনা আক্তার। এগিয়ে এসে জানালেন নিজের দুঃখের কথা। তিনি ও তার স্বামী মানুষের হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণ-রোপা খুঁজে দিতেন। এ পেশায় যা আয় হতো তা দিয়েই চার সন্তানসহ ছয় জনের সংসার চলতো। কিন্তু করোনা সংক্রমন শুরুর পর এই আয়টুকুও বন্ধ।
সেলিনা বলেন, করোনার শুরুতে দু’দফায় সরকারি সহায়তা পেয়েছিলাম। যা দিয়ে পাঁচদিন চলে। কিন্তু এরপর আর কেউ আমাদের খবর নেয়নি। দিনে একবার আটার রুটি খেয়ে থাকি। কয়েকদিন পর পর ভাতের সামনে বসাতে পারি পুলা-মাইয়্যাদের। তাদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার খোয়াই নদীর বাঁধে তেঘরিয়া যাওয়ার রাস্তায় এই বেঁদে পল্লীর অবস্থান। তারা প্রায় ১৫ বছর পূর্বে এখানে অস্থায়ী বাসস্থান তৈরী করেছিলেন। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ত্রিশটি শিশু দৌড়াদৌড়ি করছে। অনেকেরই পড়নে নেই বস্ত্র। এদের মাঝে একজনও স্কুলে ভর্তি হয়নি বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
বেঁদে পল্লীর সর্দার ছিলেন আব্দুল গফুর। তিনি মারা যাওয়ায় দায়িত্ব পালন করছেন তার ছেলে সালমান মিয়া। সালমান জানান, তাদের স্থায়ী বাসস্থান সিলেটের ছাতকে। ১৫ বছর পূর্বে এখানে আসেন। শ্রম আর ঘামে, অভাব-অনটনে চলতো সংসার। করোনা শুরুর পর তারা একেবারেই অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। প্রতিদিন চুলায় চালও উঠে না। ভাত খেতে হয় দু’য়েকদিন পর পর। বাকী দিনগুলো সামান্য খাবার দিয়ে চলে।
সালমান আরো জানান, বেঁদে পল্লীর পনেরটি পরিবারে লোকসংখ্যা প্রায় ৬০ জন। করোনা সংক্রমন শুরুর পর খেয়ে-না খেয়েই তাদের সংসার চলছে। দু’দিন সহায়তা পেলেও এলাকার ভোটার না হওয়ায় পাঁচ মাসের ভেতরে তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি।
এখনতো বিনা টাকায় লেখাপড়ার সুযোগ রয়েছে, তাহলে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠান না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান বলেন, আমরা এখানের ভোটার না। যে কারণে ঠিকমত সহায়তাই পাই না। আমাদের বাচ্চাদের পড়াবে কে?

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *