মাচায় ঝুলন্ত তরমুজে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখছেন তৌহিদ

প্রথম পাতা

মোঃ মামুন চৌধুরী ॥ দূর থেকে দেখলে মনে হবে মাচায় লাউ-কুমড়া ঝুলছে। কিন্তু কাছে গিয়ে ভালো করে দেখলে ভুল ভাঙবে যে এগুলো লাউ বা কুমড়া কিছুই নয়। নেট দিয়ে মোড়ানো ব্যাগের ভেতরে এক একটা রসালো তরমুজ।
বাহুবল উপজেলার কৃষক তৌহিদ মিয়ার বাগানে গেলে অসময়ে এমন রসালো তরমুজ দেখে যে কারোরই মন ভরে যাবে। সাগর কিং জাতের এ তরমুজই এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে উপজেলার হাফিজপুর গ্রামের তৌহিদকে।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে তৌহিদ মিয়া এ উপজেলায় সর্বপ্রথম ‘সাগর কিং’ জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। এজন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম তাকে উন্নতজাতের বীজ সংগ্রহ করে দেওয়া থেকে শুরু করে নিয়মিত দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ২৫ শতক জমিতে জমিতে এ বীজ রোপণ করা হয়েছে। রোপণের ৫৫ দিনের মধ্যে তরমুজের ফুল ও ফল আসে। বর্তমানে প্রায় ৭০০ তরমুজ রয়েছে তার জমিতে। এদের মধ্যে কোনো কোনোটা ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর ১৫-২০ দিন পরেই তিনি তরমুজ সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।
এ তরমুজ উৎপাদনে তৌহিদ মিয়া প্রাকৃতিক জৈব সার ব্যবহার করেছেন এবং এতে কোনো বিষ প্রয়োগ করেননি। পোকামাকড় নিধনের জন্য তিনি ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়োলো কালার ট্যাপ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। এসবই তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শে করেছেন। এতে এ পর্যন্ত তার প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। সেই হিসেব করে লাভের আশায় কৃষক তৌহিদ মিয়া মুখে প্রশান্তির হাসি দীর্ঘ হচ্ছে।
কথা হলে কৃষক তৌহিদ মিয়া বলেন, করোনার সময়ে আমার হাতে কাজ ছিল না। তখন আমি বেশ চিন্তিত ছিলাম। এসময় আমি বিকল্প আয়ের সন্ধান করতে থাকি। এই সময় মাচায় তরমুজ চাষ সম্পর্কে কৃষি অফিস থেকে জানতে পারি। এরপর এ বিষয়ে সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে এই এলাকায় আমিই প্রথম নোনা মাটিতে অসময়ের এ তরমুজ চাষ করি। এজন্য আমার এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর কিছু দিন পর থেকে তরমুজ বিক্রি করতে পারবো। এভাবে উৎপাদন অব্যাহত থাকলে আশা করছি আমার সব খরচ বাদ দিয়ে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা লাভ থাকবে আমার।
এলাকার কৃষক রুস্তম আলী বলেন, অসময়ে তরমুজ চাষ করে তৌহিদ মিয়া এলাকায় ভালই সাড়া জাগিয়েছেন। আমি নিজে তার বাগান দেখে এসেছি। বাগানে প্রচুর ফল এসেছে। আরও অনেক ফুল আছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে আরও অনেক ফল আসবে বলে মনে হচ্ছে। এগুলো সে বিক্রি করে ভাল লাভ করতে পারবে। হাফিজপুর গ্রামের আরেক কৃষক শওকত আলী বলেন, আমি তৌহিদের বাগান দেখেছি। তিনি তরমুজ চাষে পুরোপুরি প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন বলে তার খরচও অনেক কম হয়েছে। এমনকি তিনি জমিতে তেমন কীটনাশকও দেন নাই। তাই তার অনেক লাভ হবে। সরকারি সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে আগামী মৌসুমে এই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ আমিও করবো। শুধু আমি না এলাকায় এমন আরও অনেক কৃষক করবে। উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম জানান, মোটিভেশনের মাধ্যমেই কৃষক তৌহিদ মিয়াই প্রথম হাফিজপুরে অফ সিজনে মাচায় তরমুজ চাষ করেছেন। আর মাত্র ২০ দিন পর তার বাগান থেকে এসব তরমুজ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা যাবে। আশা করছি এ কৃষকের সফলতায় আগামী বছর অফ সিজনে উপজেলা জুড়ে এই তরমুজ চাষ বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে, মাচায় তরমুজ চাষ দেখতে প্রতিদিন আশপাশের এলাকার কৃষকরা তার (কৃষক তৌহিদ) কাছে আসছেন। কীভাবে আগামীতে তারা নিজ নিজ জমিতে তরমুজ চাষ করবেন সে সম্পর্কে পরামর্শ নিচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, পরিশ্রম করলে তার ফল আসবেই। তার প্রমাণ পেয়েছেন কৃষক তৌহিদ মিয়া। তার সামান্য জমিতে সাগর কিং জাতের তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষ করা এই ফসলই এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে উপজেলার আরও অনেক কৃষককে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল বলেন, এ কৃষক উপজেলায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার তরমুজ চাষ দেখে এলাকার অন্য কৃষকরা উৎসাহিত হয়েছেন। অনেকেই এ জাতের তরমুজ চাষ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তমিজ উদ্দিন খান জানান, বাহুবলে প্রথম সাগর কিং তরমুজ চাষে সফলতা এসেছে। আশা করা হচ্ছে দিন দিন তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে। আর আমরা বিষমুক্ত তরমুজ চাষে কৃষকদেরকে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *